শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদাতাদের বার্ষিক মিলনমেলা ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অঙ্গন পাঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল তানোরে মাদক ও বাল্যবিবাহ বিষয়ক সচেতনতামূলক আলোচনা সভা খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে দোয়া ও ইফতার মাহফিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে অসহায়দের মাঝে ইফতার বিতরণ গভীর রাতে পুড়ে ছাই আড়াইশ হাঁশ-মুরগিসহ দোকান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দোয়া ও ইফতার মাহফিল প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ তানোরে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

৫০ কোটির ৮ ফুটওভারব্রিজে পা পড়ে না কারও

প্রথম পাতা
প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন

নান্দনিক নির্মাণশৈলীর ধবধবে সাদা ফুটওভার ব্রিজগুলো নজর কাড়ে সবার। সড়কবাতির কল্যাণে রাতে এগুলোর সৌন্দর্য যায় আরও বেড়ে। একটি-দুটি নয়, রাজশাহী নগরীতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এমন ফুটওভার ব্রিজ করা হয়েছে আটটি। কিন্তু এগুলো নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি। সড়ক পারাপারে ফুটওভার ব্রিজগুলো ব্যবহার করেন না পথচারীরা। কেবল ছবি তোলা কিংবা টিকটকারদের ভিডিও করার জন্যই ব্যবহার হচ্ছে এগুলো।

অনেকেই বলছেন, এগুলো নির্মাণ করে সরকারি অর্থের অপচয় করা হয়েছে। এগুলো নির্মাণ করতে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত কি না তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে শহরের ছয় স্থানে ছয়টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানগুলো হলো নগরের বিনোদপুর বাজার, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ গেট, লক্ষ্মীপুর মোড়, নওদাপাড়া বাজার, তালাইমারী মোড় এবং ভদ্রা এলাকায় অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়ক। এ ছাড়া নগরের মণিচত্বর ও মিশন গার্লস স্কুলের সামনে আরও দুটি ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণকাজ চলছে। ব্রিজগুলোর উচ্চতা ৫ দশমিক ৮ মিটার। প্রস্থ ৩ দশমিক ৬ মিটার। দুটি প্যাকেজে প্রায় ৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লিমিটেড এবং এমএসসিএল অ্যান্ড এমএসডিবিএল নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন দায়িত্বে থাকাকালে এগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তিনি এগুলোর উদ্বোধন করতে পারেননি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরে বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী সিটির প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর গত ১১ সেপ্টেম্বর ছয়টি ফুটওভার ব্রিজের উদ্বোধন করেন।

বিনোদপুর বাজারের ফুটওভার ব্রিজের নিচেই ফল ব্যবসায়ী মো. সেলিমের দোকান। তিনি বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল ফুটওভার ব্রিজ খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন মানুষকেও ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখলাম না। মাঝেমধ্যে কাউকে কাউকে ফুটওভার ব্রিজের ওপর উঠে ছবি তুলতে বা টিকটক করতে দেখা যায়।’

গত শুক্রবার বিকেলে নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের সামনের ফুটওভার ব্রিজে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে এটির ওপর দিয়ে কাউকে পারাপার হতে দেখা যায়নি। সন্ধ্যার আগে সেখানে ছবি তুলতে আসেন দুই তরুণী। তাঁরা জানান, অনেকেই এসব ফুটওভার ব্রিজের ওপর ছবি তোলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ছবি দেখে তাঁরাও এসেছেন ছবি তুলতে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, এই ফুটওভার ব্রিজটি হওয়ার কথা ছিল কিছুটা পশ্চিমে সিঅ্যান্ডবি মোড়ে। কিন্তু সেখানে ফুটওভার ব্রিজ করলে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর দোকানের সামনের অংশ আড়াল হয়ে যাচ্ছিল। পরে ওই নেত্রীর চাপে ফুটওভার ব্রিজ সরিয়ে নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের সামনে নেওয়া হয়। কিন্তু কলেজের শিক্ষার্থীরাও এটি ব্যবহার করেন না।

নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের অভ্যাস হলে ভালো। কিন্তু নিচে যখন এদিক-সেদিক দিয়ে রাস্তা পারাপারের সুযোগ আছে, তখন আর কেউ কষ্ট করে ফুটওভার ব্রিজে ওঠে না। তিনি বলেন, ‘এগুলো নির্মাণ করতে নাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এই ব্যয় আসলে বাস্তবসম্মত কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত।’

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এম এস টি ইলমে ফরিদতুল বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ একটা শহরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এগুলো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা বর্তমানে রাজশাহী শহরে ছিল বলে মনে হয় না। প্রয়োজনীয়তা আগামীতে থাকতে পারে। এখন যার প্রয়োজন নেই, তার পেছনে জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয় করার কারণ কী? এগুলো বানানোর সময় প্ল্যানিং ও ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারও কোনো মতামত নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না।’

জানতে চাইলে রাজশাহী সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা শহরে তীব্র যানজটের মধ্যেও মানুষ এখনো সেভাবে ফুটওভার ব্রিজ সহজে ব্যবহার করে না। সেখানে রাজশাহীর মানুষ এখনই এগুলো ব্যবহার করবে সেটা ভাবা যায় না। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হবে।’

সিটির প্রশাসক ও রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘এগুলো যে কারণেই হোক নির্মাণ করা হয়ে গেছে। সেটি তো আর নষ্ট করা যাবে না। এগুলোর ব্যয় আসলেই কত তা খতিয়ে দেখা হবে। আর আগামীতে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না। ইতিমধ্যে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।’

 

সূত্রঃ ইন্টারনেট 


আরো পড়ুন

মন্তব্য