ফজলুল হক পানিপিয়া ইউথ ক্যাম্পের প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছেন, যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। এ প্রশিক্ষণের প্রমাণ হিসেবে ক্যাম্পের প্রশাসক ক্যাপ্টেন আর কে শর্মা এবং ইনচার্জ মো. মুহসীন স্বাক্ষরিত তাঁর সনদপত্র রয়েছে। তিনি ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেওয়ার লিস্টেও রয়েছেন। তবে, এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া নির্দিষ্ট হয়নি।
ফজলুল হক, রাজশাহী মহানগরীর কাদিরগঞ্জ আমবাগান মহল্লায় এক ছোট বাড়িতে বাস করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে আবাসিক হল বন্ধ হলে তিনি তার চাঁপাই নবাবগঞ্জের নারায়ণপুরের বাড়িতে ফিরে যান। পরবর্তীতে তিনি ভারতে যান, যেখানে যুদ্ধে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলিটারি সায়েন্স অ্যান্ড হিস্ট্রি তে পড়াশোনার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তিনি অনেক যুবককে প্রশিক্ষণ দেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে ফজলুল হক এখনো সরকারি স্বীকৃতি পাননি। তার বয়স ৭৪ এবং এখনও স্বীকৃতি পেতে কি হবে তা নিশ্চিত নয়।
সম্প্রতি আলাপকালে ফজলুল বলেছেন যে, ১৯৭৫ সালে তিনি অগ্রণী ব্যাংকে চাকরি করেন এবং ২০০৩ সালে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নেন। তাঁর অবসরের পর তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তির জন্য অনেকবার আবেদন করেছেন, কিন্তু তাঁর নাম অন্তত তথ্যসূত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। চট্টগ্রামে কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি আর আবেদন করতে পারেননি। তিনি ২০১৭ সালে তার ছেলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন, এবং ২০২২ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে আরেকবার আবেদন করেন, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফজলুল হক এখনো তার কাগজপত্র নিয়ে অফিস কাঁদে বেড়ান।
ফজলুল বলেন, “সব জায়গায় আমার নাম আছে। আমার কাছে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এখনো বেঁচে আছেন। তাঁরা খোঁজ নেন, সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমি এখনো তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। অবসর জীবনে আমি এখন চরম আর্থিক সংকটে আছি। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটা পেলে পরিবার উপকৃত হবে। মৃত্যুর আগে আমি এই স্বীকৃতি পাব কি না, তা জানি না। এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া।”