পোষ্য কোটা বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসন ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, শিক্ষার্থীদের অন্য দুইটি দাবি হলো- ফ্যাসিস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের আওতায় আনা এবং দুইজন ফ্যাসিবাদী শিক্ষককে সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেওয়ার জন্য উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে উন্মুক্ত স্থানে কারণ দর্শানো।
এসময় 'পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে, লড়াই হবে একসাথে', 'আপোষ না সংগ্রাম,, সংগ্রাম সংগ্রাম', 'দালালদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে', 'মেধাবীদের কান্না, আর না আর না', 'জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো', 'আবুসাঈদ-মুগ, শেষ হয়নি যুদ্ধ'সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। অবস্থান কর্মসূচিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, পোষ্য কোটা মানেই অযোগ্যদের সুযোগ করে দেওয়া। এটা জাতির জন্য ক্ষতিকর। এরপরও পোষ্য কোটা রাখতে চাইলে দেশের সকল দরিদ্র মানুষের সন্তানের জন্য পোষ্য কোটা রাখতে হবে।
আন্দোলনকারী কামরুল হাসান, আমাদের জুলাইয়ের মূল ম্যান্ডেট ছিল কোটা বাতিল। পরবর্তীতে সরকারের বল প্রয়োগে তাদেরই পতন হয়েছে। এর পরেই নতুন প্রশাসন ন্যায্যতার ভিত্তিতেই চেয়ারে বসেছে। কিন্তু, চার মাস পেরোতেই আমাদের আশা ব্যহত হয়েছে, কোটার বিরুদ্ধে আবার স্লোগান দিতে হচ্ছে। এতে আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের ভেতরেই বাতিল করে নতুন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন।
মুঠোফোনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে কেউ আন্দোলন করতে পারে তবে কারোর নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আন্দোলন করাটা মোটেও যৌক্তিক নয়।
গতরাতে নতুন এই সিদ্ধান্তের উপর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন, কোটা ইস্যু নিয়ে আর কোনো ধরনের যন্ত্রণা চাই না। নতুন যন্ত্রণা সৃষ্টির আর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এই ধরনের চেষ্টাকে অপচেষ্টা বলে বিবেচনা করা হবে।
তিনি লিখেছেন, আজ যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভর্তি উপকমিটির সকালে মিটিং ছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা যারা কোনো বিচারেই অনগ্রসর শ্রেণিতে পড়েন না, তাদের জন্য আর কোটা সুবিধা থাকছে না।
কর্মচারীদের সন্তানদের কেন ১ শতাংশ কোটা রাখা হলো সে বিষয়ে তিনি লিখেছেন, একেবারে লোয়ার লেভেলে যারা সার্ভিস দিচ্ছেন তাদের জন্য ১% কোটা এখন থাকছে। এর কারণটা বলি। আজ প্রায় ৩৪ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্ক। শুরু থেকেই দেখেছি, সুইপারের সন্তান সুইপার হচ্ছে, মালির ছেলে মালি। যদিও আমি প্রতিটি পেশাকে মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে করি, কিন্তু সমাজ আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে চলে না। আমি মনে করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এই শ্রেণিটির এই বৃত্ত ভাঙ্গার একটা সুযোগ এবারও থাকা উচিত।
সআলো/অ/**