মুদ্রণের সময়ঃ ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫, ১১:৫৩ পি.এম || প্রকাশের সময়ঃ ডিসেম্বর ১১, ২০২৪, ৩:০৬ পি.এম
রাজশাহী বিভাগে ৪ লাখ মামলার জট, নিষ্পত্তি কবে?
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় বছরের পর বছর ধরে চার লাখেরও বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচার প্রার্থীরা। আদালত ভবনের ঘাটতি ও বিচারক সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় লাগছে এ বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় বলে জানান আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা।
সরেজমিনে রাজশাহীর আদালত চত্বরে কথা হয় সত্তরোর্ধ্ব সেরেনা বেগমের সঙ্গে; তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত মামলায় ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নাতিকে নিয়ে ঘুরছেন আদালতে। বয়সের ভারে তিনি ন্যুব্জ হয়ে পড়লেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলার।
সেরেনা বেগমের দাবি, নগরীর মির্জাপুর এলাকায় তার এক বিঘা জমি দখল করে নিয়েছেন মামাতো ভাইয়েরা। সেই জমি ফিরে পেতে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মামলা চালাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি।
আদালতের বারান্দায় প্রতিদিন এমন অনেকেরই দেখা মেলে, যারা বছরের পর ঘুরছেন বিচারের আশায়। তবে আদালত ভবন ও বিচারক সংকটের কারণে দীর্ঘ হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়া।
জেলার ৩৬টি আদালতে চেক প্রতারণার মামলা ২০ হাজার, জমি সংক্রান্ত মামলা ৩৫ হাজার, পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত মামলা ১২ হাজার, রাজনৈতিক মামলাসহ সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
বগুড়া আদালতে বিচারাধীন অনেক মামলা রয়েছে, যেগুলোর বাদী-বিবাদি কেউই বেঁচে নেই। এরপরও যুগের পর যুগ মামলা চলছে। জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, স্পেশাল জজ আদালত, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়ানি, ফৌজদারি ও আপিলসহ মোট ৭৫ হাজার মামলা বিচারাধীন।
বিচারাধীন মামলার মধ্যে বেশি জমিজমা সংক্রান্ত দেওয়ানি মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্য, বিস্ফোরক দ্রব্য, অর্থ ঋণ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা। তবে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে আদালতে বিচারাধীন আছে সিভিল কোর্টগুলোর প্রায় ৪০ হাজার মামলা। এর হত্যা-বিস্ফোরক, ডাকাতিসহ ফৌজদারি প্রায় ৩৫ হাজার মামলা বগুড়া আদালতে বিচারাধীন।
নাটোরের দেওয়ানি ও ফৌজদারি ২২টি আদালতে ২০ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালতগুলোতে ৭ জন বিচারকের পদ শূন্য থাকায় বাড়ছে মামলা জট। ফলে কোনো কোনো মামলার বিচার পেতে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বিচার প্রার্থীদের। বিচারক সংকটের পাশাপাশি চিফ জুডিশিয়াল আদালতের নিজস্ব ভবন না থাকায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনে বিচার কাজ করছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা।
একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের আদালতেও। মামলা জটের কারণে বছরের পর বছর ধরে আদালতে ঘুরতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। যুগ যুগ ধরে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
নওগাঁয় ১৩টি আদালতে দুজন বিচারকের পদ ফাঁকা রয়েছে। এরমধ্যে নারী শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে চার হাজার ২২০টি। এ ছাড়া চিপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮ হাজার ৪৫২ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আর জজকোর্টে ২৬ হাজার ১৭৩ দেওয়ানি ও ফৌজদারি ১২ হাজার ৭৬৮ মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিচার প্রার্থীদের।
রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি প্রায় সাড়ে চার লাখেরও বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
সয়টি/ভি/২৬
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | দৈনিক প্রথমপাতা