শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে ৫৫০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে বিতর্কিত সেই মজিদ সন্স

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন

বালিশকাণ্ড ও ছাদ ধসের ঘটনায়ও কালো তালিকাভুক্ত হয়নি। 

রূপপুরের বালিশকাণ্ড এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাদ ধসের ঘটনায় বিতর্কিত ‘মজিদ সন্স অ্যান্ড কন্সট্র্রাকশন’ রাজশাহী মহানগরীতেই প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার কাজ করছে। এর মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ১.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ কাজই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঢিলেমির অভিযোগ উঠেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের ফ্লাইওভার নির্মাণ কতটা নিরাপদ? এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে গতকাল রবিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের ছাদ ধসের ঘটনায় ঠিকাদারি কাজের নথিপত্র অনুসন্ধানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের কর্মকর্তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ ভবন নির্মাণসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযান চালান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চান। দুদক কর্মকর্তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এ বিষয়ে দুদকের রাজশাহী জেলার উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদ ধসের ঘটনায় দুদক রাজশাহীর জেলা টিমের সদস্যরা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন ও নথিপত্রের সন্ধান করেছেন। ভবনে কারিগরি ত্রুটি আছে কি না—তা চিহ্নিত করতে সিভিল প্রকৌশলীদের রাখা হয়েছে। তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় রাসিকের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের ১০৭ ধরনের কাজের মধ্যে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ রয়েছে। একই বছর ফ্লাইওভারের নকশা প্রণয়ন ও পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০২২ সালে নকশা চূড়ান্ত ও দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালে নগরীর বর্ণালী মোড়, বন্ধগেট ও বিলিসিমলা রেলক্রসিংয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার ২৫৫ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ পায় আলোচিত মজিদ সন্স। সম্প্রতি ৭৯ কোটি টাকার এই ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাসিক সূত্র জানায়, সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ মজিদ সন্সকে দিতে শুরু থেকেই সংশ্লিষ্টদের ওপর প্রভাবশালী মহলের চাপ ছিল। একই মহলের চাপে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ও রাজশাহী ওয়াসার কাজ পায় মজিদ সন্স।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বালিশকাণ্ডে আলোচিত হয় এই মজিদ সন্স। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্পের আবাসিক ভবনে আসবাবপত্র ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেখানে একটি বালিশের দাম ৬ হাজার ৭১৭ টাকা দেখানোর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ঘটনাটি ‘বালিশকাণ্ডের’ পরিচিতি পায়। বাংলাদেশে একটি বালিশের বাজারমূল্য ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। কিন্তু প্রকল্পের প্রতিটি বালিশের মূল্য দেখানো হয় বাজারমূল্যের প্রায় ১৪ গুণ। প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ফ্ল্যাটে বালিশ তোলার খরচ দেখানো হয় ৯৩১ টাকা করে। খাটের মূল্য ৪৩ হাজার ৩৫৭ দেখানো হয়। প্রতিটি ডাইনিং টেবিল সেটের মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৪ টাকা।

এরপর গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মজিদ সন্সের নির্মাণাধীন শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান আবাসিক হলের ছাদ ধসে পড়ে। ৩০ ফুট উঁচু ও ৬৯ ফুট প্রশস্ত ছাদ ঢালাই কাজে স্পেশাল কোয়ালিটির শাটারিং দরকার হলেও তা করা হয়নি। এছাড়া বিমের ঢালাই শক্ত হওয়ার আগেই ছাদ ঢালাই শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এই গাফিলতি তখন দেশ জুড়ে আলোচিত হয়।


আরো পড়ুন

মন্তব্য