শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৮:৫০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদাতাদের বার্ষিক মিলনমেলা ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অঙ্গন পাঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল তানোরে মাদক ও বাল্যবিবাহ বিষয়ক সচেতনতামূলক আলোচনা সভা খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে দোয়া ও ইফতার মাহফিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে অসহায়দের মাঝে ইফতার বিতরণ গভীর রাতে পুড়ে ছাই আড়াইশ হাঁশ-মুরগিসহ দোকান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দোয়া ও ইফতার মাহফিল প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ তানোরে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

রাজশাহীতে ডিসি-এসপির নাম ভাঙিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর

প্রথম পাতা ডেস্ক
প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

রাজশাহী মহানগরীতে বিশাল আয়তনের একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। যাঁরা ভরাটের কাজে নিয়োজিত, তাঁরা জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপারের (এসপি) নাম ভাঙাচ্ছেন। বলছেন, এই পুকুরে এসপি ও ডিসির মালিকানা রয়েছে। তবে সেই এসপি ও ডিসি কোন জেলার তা তাঁরা বলছেন না। গত ২৫ মার্চ রাত থেকে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। অবৈধ এই পুকুর ভরাট বন্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

প্রায় আট বিঘা আয়তনের পুকুরটি রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার দায়রাপাক মোড় এলাকায়। নবনির্মিত চার লেনের পাশেই পুকুরটি। প্রকাশ্যেই ট্রাকের পর ট্রাক বালু ফেলে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। অথচ আইন অনুযায়ী, জমির শ্রেণি পরিবর্তন নিষিদ্ধ। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় আর একটিও পুকুর ভরাট যেন না হয়, সেই নির্দেশনাও দিয়ে রেখেছেন উচ্চ আদালত। জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি তদারকি করতে বলা হলেও সবাই চুপচাপ।

পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করতেন কয়েকজন ব্যক্তি। তাঁদের একজন মো. টুটুল। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই তাঁরা পুকুরটিতে মাছ চাষ করতেন। আগে এর মালিক ছিলেন নাটোরের গোলাম মাওলা নামের এক ব্যক্তি। সম্প্রতি পুকুরটি কয়েকজন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে শুধু আবদুল হালিম নামের এক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। অন্য কেউ সামনে আসেননি। ইজারার মেয়াদ থাকলেও তাঁকে কিছু না জানিয়েই সম্প্রতি পুকুরটি ভরাট শুরু করা হয়। তাতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন।

মো. টুটুল আরও বলেন, পুকুর ভরাট শুরুর কয়েক দিন পর মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে নির্ধারণ করা টাকার বেশির ভাগই বুঝে পেয়েছেন। অল্প কিছু বাকি। এই পুকুরের মালিকানায় কারা আছেন সেসব নিয়ে তিনি এখন কথা বলতে চান না।

গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহী নগরীর নবনির্মিত আলিফ লাম মিম ভাটার মোড়-বিহাস সড়কে গিয়ে দেখা যায়, বালুঘাট থেকে সারি ড্রাম ট্রাক বালু নিয়ে পুকুরে যাচ্ছে। একসঙ্গে সাত-আটটি ট্রাক বালু নিয়ে চলে আসার কারণে একটু দূরে সারি সারি ট্রাক অপেক্ষা করছে। একটি ট্রাক বালু ফেলে আসার পর অন্যটি যাচ্ছে। আর পুকুরপাড়ে ট্রাকের ফেলে যাওয়া বালু একটি পেলোডারের মাধ্যমে পুকুরের পানির কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত ২৫ মার্চ থেকে প্রতিরাতেই এভাবে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। দিনে কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকছে।

পুকুরে বালু ভরাটের কাজ দেখাশোনা করছেন নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুম। তিনি বলেন, ‘এই পুকুরে এসপি-ডিসির মালিকানা আছে। তাঁরাই এটি ভরাট করছেন। ভরাটের আগে এটার শ্রেণি ভিটা করে নেওয়া হয়েছে।’ আসলেই এটা ভিটা নাকি পুকুর, এমন প্রশ্নে মাসুম বলেন, ‘পুকুরই তো দেখছি। এখন কাগজে-কলমে ভিটা করে দিলে আমাদের কী। সবই তো সম্ভব।’ কোন জেলার এসপি-ডিসি এই পুকুরের মালিকানায় আছেন জানতে চাইলে মাসুম বলেন, ‘সেটা আমি বলতে পারব না। লালন ভাই বলতে পারবেন।’

লালন শেখের বাড়িও নগরীর বুধপাড়া এলাকায়। তিনি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সদস্য। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড শাখার নিরাপত্তা প্রহরী। রাজশাহীর সন্ত্রাসী গ্রুপ তরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যোগাযোগ করা হলে লালন শেখ বলেন, ‘এই পুকুরের মালিক কে সেটা আমিও জানি না। আমাকে ভরাট করার জন্য একজন কাজ দিয়েছেন। আমি ভরাট করছি।’ পুকুর ভরাট আইনে নিষিদ্ধ, এটা জানেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এত কথা আমি বলতে পারব না।’

স্থানীয়রা জানায়, অবৈধভাবে পুকুর ভরাটের বিষয়ে প্রতিরাতেই পুলিশ-প্রশাসনকে অবহিত করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, ‘যখন খবর পাচ্ছি, তখনই পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করছি। পুকুরের মালিক কে সেটা বলতে পারব না। যারা ভরাট করছে তারা কারও নাম বলছে না।’

অবৈধভাবে পুকুর ভরাট করা হলেও কাউকে আটক করা হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘মামলা না থাকলে সেটা আমি পারি না। ভূমি অফিস যদি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করে, তাহলে ধরতে পারি। পুকুর ভরাটের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাচ্ছি। কেউ তো আসছে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর ডিসি শামীম আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টা আমি জানতাম না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পুকুর ভরাটের সময় ডিসি-এসপিদের নাম ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোন জেলার এসপি-ডিসি তারাই বলুক।’ পুলিশ কেন এত দিন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সে প্রশ্ন তোলেন ডিসি।

সূত্রঃ আজকের পত্রিকা


আরো পড়ুন

মন্তব্য