মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
রাজশাহীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর জন্মবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল Reel Hit Video slot On line Free No Obtain মোহনপুরে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে স্হানীয় শিল্প,পণ্য প্রদর্শনী,পিঠা উৎসব ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত সারাদেশে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন Tomb Raider dos Pokies Online because of the Microgaming Play Totally free Slot রাজশাহীতে তারুণ্যের উৎসবে ২০২৫ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন রাজশাহীতে শীতার্ত দু:স্থ অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিকে বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত মোহনপুরে সরকারি ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ টাউন ক্লাবের আয়োজনে শীত বস্ত্র বিতরণ

৪৯ বছর পরে, নারোয়ের এলিজাবেথ মাদারীপুরে তার মাকে খুঁজে পেলো।

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

১৯৭৫ সালের ঘটনা। তেরো বছরের কিশোরী ফিরোজা বেগমের বিয়ে হয়ে যায়। গর্ভবতী হওয়ার পাঁচ মাস পর তিনি তার স্বামীকে হারান এবং তার পিতাও মারা যান। স্বামী ও পিতাকে হারিয়ে ফিরোজা দারিদ্র্য ও অভাবের কঠিন সময়ের মুখোমুখি হন। এই পরিস্থিতির মাঝেই, ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই, ফিরোজা এক কন্যা সন্তানের মা হন, যার নাম রাখেন মৌসুমী। তিনি তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করেন, কিন্তু তা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

অভাবের চাপ সহ্য করতে না পেরে, একই বছরের ৩০ আগস্ট ফিরোজা বেগম ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সমাজসেবা অধিদপ্তর চালিত শিশুসদনে তাঁর সন্তানকে বিনা শর্তে দিয়ে দেন। মৌসুমীর বয়স যখন মাত্র চার মাস ছিল, তখন নরওয়ে থেকে এক নিঃসন্তান দম্পতি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাকে দত্তক নেন। মৌসুমীর নতুন নাম রাখা হয় এলিজাবেথ রয়েড।

যে সময় ফিরোজা বেগমের শিশুসদনে দেওয়া সন্তানের বয়স ২২ বছর হলো, সে জানতে পারে তার মা বাংলাদেশের। কিন্তু তার মা সম্পর্কে বেশি তথ্য তার কাছে ছিল না। মাকে খুঁজে বের করার ইচ্ছা নিয়ে অনেক বছর কেটে গেছে। বহু চেষ্টা ও অনুসন্ধানের পর, শেষমেষ এলিজাবেথ সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বাস্তব মা ফিরোজা বেগমের খোঁজ পেলেন।

অবশেষে মা-মেয়ে  

৪৯ বছরের অপেক্ষা শেষ হলো গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ)। মা-মেয়ের দেখা হলো মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর এলাকার ফিরোজা বেগমের বাড়িতে। এ সময় মাকে কাছে পেয়ে এলিজাবেথ ফিরোজা জড়িয়ে ধরেছেন, কান্নায় আবেগে আপ্লুত হয়েছেন মা-মেয়ে। এলিজাবেথ বাংলা ভাষা না জানায় কেউ কারও মুখের ভাষা বুঝতে না পারলেও আবেগ-অনুভূতি দিয়েই ভাবের আদান-প্রদান করেন তাঁরা। মাকে কাছে পেয়ে বারবার মুখে মুখ মেলান আর দুজনের চেহারার মিল খুঁজছিলেন এলিজাবেথ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা সময় কাটানোর পর বিকেলেই স্বামী হেনরিক ফাজালসেটের সঙ্গে ঢাকায় ফিরে যান এলিজাবেথ।

ফিরোজা বেগম বলেন, মায়ের জন্য নরওয়ে থেকে নতুন জামা-পায়জামা, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে এসেছেন তাঁর মেয়ে এলিজাবেথ ফিরোজা ওরফে মৌসুমী। বাড়িতে এসে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব বাজার করে দিয়েছেন মেয়ে ও জামাতা। আর নরওয়ে থেকে তাঁর মাকে যেন দেখতে পারেন, এ জন্য কিনে দিয়েছেন একটি স্মার্টফোন।

ফিরোজা বেগমের মেয়ে নরওয়ে থেকে ৪৯ বছর পরে ফিরেছেন। এই খবর শুনে প্রতিবেশীরা তাকিয়ে দেখতে উৎসাহিত হয়েছেন।  ছবিঃ  বৃহস্পতিবারে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর এলাকায়

৫০ বছর পরে সেই ছোট্ট মৌসুমীকে এলিজাবেথ হিসেবে দেখতে পাবেন, এমন কিছুই ভাবেননি ষাটোর্ধ্ব ফিরোজা বেগম। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তিনি  বলেন, ‘আমার মাইয়াডা যে বাইচা আছে, এত বড় হয়েছে, তাই কোনো দিন চিন্তা করি নাই। আমার মাইয়াডা ফিরা আসছে, বুকে জড়াইয়া ধরতে পারছি, এইডা ভাবলেই আমার কলিজা ছিঁড়া যাচ্ছে। আমার বুকের ধনরে আল্লাহ তুমি ফিরাইয়া দিলেন, তোমার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। ফিরোজা বেগম শনিবার বিকেলে ঢাকায় গিয়েছেন। রবিবার দুপুরে তার মেয়ে এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা হবে। এলিজাবেথ তাকে তাড়াতাড়ি নরওয়েতে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের মৃত বছির সরদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম। তিনি স্বামী মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। তবে সেই ঘরে কোনো সন্তান নেই ফিরোজা বেগমের। আগে ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি, কিন্তু এখন স্বামীসহ পোদ্দারচরে বসবাস করছেন।

মাদবরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, ‘মা আর মেয়ের একত্র হওয়াটা যেন এখনো চোখে ভাসছে। তাদের গল্পটা হৃদয় জুড়িয়ে দিয়েছে। ৪৯ বছর পর মেয়ে তাঁর মাকে ফিরে পেয়েছে। মেয়ে মায়ের টানে সেই সুদূর নরওয়ে থেকে আমাদের এলাকায় এসেছে। সত্যিই সবকিছু রূপকথার গল্পের মতো মনে হচ্ছে। তবে এটিই সত্যি।’

মা খুঁজে পেলেন কিভাবে?

এলিজাবেথ ও তার বন্ধু খ্রীষ্টফারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরওয়ের আরেন্ডাল শহরে স্বামী হেনরিক ফাজালসেট আর চার সন্তান নিয়ে বসবাস করেন এলিজাবেথ ফিরোজা ফাজালসেট। ১৯৭৫ সালে নরওয়ের চিকিৎসক রয় রয়েড আর তাঁর স্ত্রী ক্যারেন রয়েড দম্পতি এলিজাবেথকে দত্তক নেন। এলিজাবেথ পেশায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী। বড় হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন তাঁর প্রকৃত বাবা-মা বাংলাদেশি। তবে জানতেন না তাঁরা কারা। শুধু জানতেন মায়ের নাম ফিরোজা বেগম আর বাবা মৃত বশির সরদার। জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের ঢাকা শহরে। আর এই তথ্যও তিনি পেয়েছেন প্রথম পাসপোর্ট আর নরওয়ের দত্তক নেওয়া পরিবারের কাছে থাকা দলিলপত্র থেকে।

 

এলিজাবেথ বাংলা ভাষা না জানলেও তাঁর মুখের ভাষা বুঝতে অব্যাহত রকমে আবেগ-অনুভূতি দিয়ে ভাবের আদান-প্রদান করেন মা-মেয়ে

শুরু হলো মা খোঁজার নতুন যুদ্ধ। ২০১৩ সালে স্বামী–সন্তানদের সঙ্গে এলিজাবেথ প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন। মা খোঁজাখুঁজির অনুভুতিতে খালি হাতে ফিরতে হলো। তবে এলিজাবেথ তার বাংলাদেশি বন্ধু খ্রীষ্টফারকে নিজের মায়ের কথা বলে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে গত ২৩ মার্চে স্বামী নিয়ে আবারও বাংলাদেশে মা খোঁজে আসলেন এলিজাবেথ। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মোস্তফা জামিল খানের সহযোগিতা নেন। সেখান থেকে গেলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরে। সেখানে আবু নাঈম খুঁজে বের করে দত্তক নেওয়ার পুরোনো নথি, যেখানে ছিল এলিজাবেথের মায়ের গ্রামের ঠিকানা।

এলিজাবেথের বন্ধু খ্রীষ্টফার প্রথম বলেন, ‘বিদেশে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগে এলিজাবেথের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। এলিজাবেথ আমার খুব ভালো বন্ধু। আমি বাংলাদেশি হওয়ায় এলিজাবেথ আমাকে সবকিছু খোলে বলে। কিন্তু আমরা প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কখনো ভাবিনি এলিজাবেথ তার মায়ের খুঁজে পাবে। সবই সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপা। মা ও মেয়ের মিলন ঘটাতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।

এলিজাবেথ ফিরোজা বললেন, নরওয়ের মা-বাবা তার নাম রেখেছেন এলিজাবেথ। বড় হয়ে তিনি জানতে পেরেছেন তার জন্ম বাংলাদেশে, মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। এরপর থেকে তিনি ফিরোজা নামটিকে নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করেন। বিয়ের পরে নরওয়ের এক চিকিৎসক তার জীবনকাহিনি জানতে চান। তখন থেকেই নিজের পরিবারের খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন। এ বিষয়ে তার স্বামী হ্যানরি ও সন্তানরা তাকে সাহায্য করেছেন। নরওয়েতে তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে এবং নাতি-নাতনি আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এলিজাবেথ ফিরোজা আরও বললেন, ‘গত দুই বছরে এক মুহূর্তের জন্যও জন্মভূমি ও মায়ের কথা ভুলতে পারিনি। নিজের মা কাছে পেয়ে নিজেকে পূর্ণাঙ্গ মনে হচ্ছে। তবে দত্তক দেওয়ার জন্য মা কে আমি কখনোই দায়ী করিনি। মায়ের সেই সময়ের অসহায়ত্বকে আমি বুঝতে পারছি। নরওয়েতে একটি ভালো পরিবারের কাছে বড় হয়েছি। নরওয়ের মা-বাবার প্রতিটি মানুষের অসীম ভালোবাসা আমাকে পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও সহায়তা পেয়েছি। সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।

সূত্রঃ প্রথম আলো 


আরো পড়ুন

মন্তব্য