নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট: সূর্যমুখী ফুল চাষ, দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বিশালায়তনের হলুদের সমারহে বিছিয়ে রাখা এক গালিচা। আর কাছে গেলে চোখ জুড়ানো হাজারো সূর্যমুখী ফুল। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেয়ে যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগী প্রকৃতিপ্রেমীদের। ভোরের সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে এই সূর্যমুখীরা। আর সেই হলুদ ফুলের হাসির সমারহের হাতছানি যেন নিজেদের বৈকালীন অবসাদ কাটাতে সেখানে ছুটে আনছেন প্রকৃতিপ্রেমীদের। মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির এই দৃশ্যের দেখা মিলেছে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের নওটিকা নামে একটি গ্রামে।
বীজ উৎপাদন ও সংগ্রহের জন্য এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে বাজিমাত করে একেবারে বাজিমাত করেছেন ওই গ্রামের চাষী দিলীপ চন্দ্র সরকার। প্রায় এক একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে এখন শুরুতেই লাভের স্বপ্ন বুনে চলেছেন তিনি।
ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বীজ উৎপাদন ও সংগ্রহের জন্য চলতি এ মৌসুমে উপজেলার নওটিকা গ্রামের চাষী দিলীপ চন্দ্র সরকার ও রুপকুমার চন্দ্র বর্মনকে পরামর্শ দিয়ে প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী রোপনের জন্য বীজ দেওয়া হয়।গেল ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বরে) বপন করা হয়েছে কাভেরীচম্প জাতের কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। আর বিনা মূল্যে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বীজ দেওয়ার পাশা-পাশি দেওয়া হয়েছে সার ও কীটনাশকও ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র আরও জানায়, রোপনকৃত সূর্যমুখী বীজের প্রায় প্রতিটি গাছেই ফুল এসেছে। খুব দ্রত এই ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।তারা সার্বিকভাবে নজরদারি করছেন।চাষী ও স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, দিনভর এই সূর্যমুখীর ক্ষেতে ভির করছেন নানান বয়সী মানুষ। সূর্যমুখী ফুলের এ ক্ষেতটি সৌন্দর্য পিপাষুদের কাছে এখন যেন দর্শনীয় স্থান । কেউ আসছেন বন্ধুদের সাথে , কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সুখস্মৃতী ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিমা মুঠোফোন কিংবা ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তারা। দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে ছবি তুলতে সবারই ভালো লাগে তাইতো এখানে ছুটে আসছেন সব বয়সের নারী পুরুষ। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।
ফুল থেকেই পাওয়া যায় বীজ। তাই ছবি তুলতে আসা কেউ যেন ক্ষেতের ভেতর ঢুকে বা ছবি তুলতে গিয়ে ক্ষেত নষ্ট না করেন এবং ফুলে হাত না দেন এজন্য সার্বক্ষণিক নজরদারী করছেন চাষী দিলীপ চন্দ্র। আর কিছুদিন পর তিনি বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। তার আগ মূহুর্তে দর্শনার্থীদের ভয়ে ক্ষেত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন দিলীপ চন্দ্র।
সরেজমিন দেখা গেছে, সূর্যমুখীর সবুজ গাছে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো ক্ষেত। এমন এক দৃশ্য প্রকৃতিকে করেছে যেন আরও রূপময়ী। প্রতিদিনই সৌন্দর্য পিপাসুরা আসছেন দিলীপ চন্দ্রের সূর্যমুখীর ক্ষেতে।
এ বিষয়ে কৃষক দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতায় বীজ উৎপাদন ও সংগ্রহের জন্য আমি এই সূর্যমুখী চাষ করেছি। আমার এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষাবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো। তবে সব খরচ বহন করেছে কৃষি অফিস। আমার এই সূর্যমুখী চাষে অনেকেই অনেক ধরনের কথা বলেছে তবে আমি বুকে সাহস রেখে কৃষি অফিসারের সহায়তায় এই পর্যন্ত এসেছি। আর কিছুদিন পর হয়তো বীজ সংগ্রহ করতে পারবো। আমি ধারনা করছি আমার জমি থেকে প্রায় ৪০-৪৫ মন বীজ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এতে আমি আর্থিকভাবে ভালো লাভবান হবো ইনশাআল্লাহ।
ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ক্ষেতলাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিন্নাতুন আরা বলেন, আমি জানতে পারি এ উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। তাই ছুটির দিনে ফুলের দৃশ্য দেখতে পরিবার নিয়ে ছুটে আসা। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে পরিবার নিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে খুব ভালো লেগেছে।
স্বামী-সন্তান নিয়ে ছবি তুলতে আসা এক গৃহবধূ বলেন, মাঠজুড়ে এমন সূর্যমুখী ফুল আগে কখনো দেখিনি। স্মৃতিতে ধরে রাখতে এখানে ছবি তুলতে এসেছি আমরা। সত্যিই পরিবেশটা খুব ভালো।
কালাই উপজেলা শুভ সংঘের সভাপতি এম.এ রাসেল আহম্মেদ বলেন, ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম। আমাদের এলাকায় এভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ এর আগে কোথাও হয়নি। কাছ থেকে ফুল দেখতে এবং কিছু সৃতি ধরে রাখতে এখানে ছুটে আসা।
ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাহিদুর রহমান জানান, সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল সংগ্রহের জন্য মূলত সূর্যমুখীর চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে আমাদের উপজেলার নওটিকা গ্রামের কৃষক দিলীপ চন্দ্র ও রুপকুমার চন্দ্র বর্মনকে পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করে দু’জনার প্রায় সাড়ে চার বিঘা পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। পুরো জমিতে ফুলে ভরে যাওয়াতে দৃষ্টিনন্দন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখন সব শ্রেণীর মানুষ ফটো তোলার জন্য ভিড় করছেন। মানুষের উপস্থিতি ভালো লাগছে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে ফটো তুলা যেন কৃষকের ক্ষতির কারণ না হয়।