রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করার সময় পোষ্য কোটার খারাপ দিকের অনেক চিত্র নজরে এসেছিল। তার একটি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের একজন চিকিৎসকের (যিনি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের পদধারী) ছেলে আইবিএতে ভর্তি হয়েছিল সেই ইনস্টিটিউটে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই।
ওই প্রতিবেদন করার জন্য ওই চিকিৎসককে ফোন দিয়ে বক্তব্য নিই। এরপর আমার ফোনে রাজশাহী শহর ও ক্যাম্পাসের একাধিক সাংবাদিক আমায় ফোন করে প্রতিবেদনটি না করার জন্য বলেন। কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত প্রতিবেদনটি করেছিলাম। তবে তৎকালীন আইবিএসের পরিচালক বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
সেই ছাত্র বাবার ক্ষমতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি পরীক্ষা না দিয়েই ছাত্র হয়েছিল। হয়তো ছাত্রত্ব শেষ করে সে বেরিয়েও গেছে।
একবার ভাবুন তো, আইবিএতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধায় থাকা শিক্ষার্থীরা কী পরিমাণ পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের পর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। কিন্তু আরেকজন বাবার কোটায় কোনো যোগ্যতা না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। মেধায় চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চিকিৎসকের ওই ছেলে যখন একই ক্লাসরুমে বসে ক্লাস করেছে, তখন মেধাবীদের জন্য বিষয়টি কতটা লজ্জার হতে পারে, ভাবুন তো?
কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পতন হয়েছে। সেই স্পিরিট নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন নিয়োগ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন পোষ্য কোটা তুলে দিতে দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। একই সঙ্গে পোষ্য কোটার নামে অনিয়ম করে যারা ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হোক। প্রমাণ সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সবশেষে একটা কথাই বলি, ২০২৪ সালে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা লাগে। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
১৬ নভেম্বর, ২০২৪
জাকির হোসেন তমাল
সাবেক ছাত্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
Source: ru_insiders