রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক এক শিক্ষার্থীর নিজ কক্ষ থেকে বিছানাপত্র সরিয়ে আরেক অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে ওই সিটে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ সময় ওই আবাসিক শিক্ষার্থীকে কক্ষ ছাড়তে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ১৪৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ইমরান ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শহিদ হবিবুর রহমান হলের ১৪৬ নম্বর কক্ষের একজন আবাসিক ছাত্র। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন মিনহাজ ইসলাম ও আহসান হাবিব ফিরোজ। মিনহাজ ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং হলের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। ফিরোজ শহিদ হবিবুর হল ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। উভয়ই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
লিখিত অভিযোগে ইমরান ইসলাম উল্লেখ করেন, ১৮ এপ্রিল দুপুরে আমি হল প্রশাসনের বরাদ্দকৃত সিটে উঠি। রাতে খাওয়ার জন্য বাইরে গেলে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজের কয়েজন নেতাকর্মী এসে আমার বিছানাপত্র সরিয়ে দেন এবং সেখানে সমাজকর্ম ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী মাহফুজুলকে (অনাবাসিক ছাত্র) তুলে দেন।
খাবার খেয়ে এসে এ অবস্থা দেখে প্রাধ্যক্ষকে ফোন দিই। তিনি ছুটিতে থাকায় ফিরে এসে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান এবং হল না ছাড়ার পরামর্শ দেন।
১৯ এপ্রিল সকালে হলের ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ আমাকে তার রুমে ডাকেন এবং কক্ষ ছাড়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেন। তিনি বলেন, ‘তোকে যদি সিটে উঠতে না দেই তাহলে প্রক্টর বা প্রাধ্যক্ষ আসবে? এখান থেকে যাওয়ার পর বিছানাপত্র নিয়ে চলে যাবি। তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজ ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী তার সিটেই থাকবে। তা ছাড়া ছাত্রলীগের কেউ যেন কোনো শিক্ষার্থীকে হলকক্ষে না ডাকে সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক করব।’
হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে আরেক নেতা আহসান হাবিব ফিরোজ বলেন, ‘প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েই ওই সিটে আমি একজনকে উঠিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে সমাধান করে দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে হলের প্রাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম জানান, ‘ঘটনাটি অবগত হয়েছি। বিষয়টি আমি দেখছি। ওই শিক্ষার্থী ওই সিটেই থাকবে।’
আবাসিক ছাত্রকে হুমকির বিষয়ে কী ব্যবস্থা, জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি কথা বলেছি, আর সমস্যা হবে না। পরে যদি একই ঘটনা ঘটলে তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজের বিরুদ্ধে হলে সিট দখল, আবাসিক ছাত্রকে হুমকি-ধমকি ও ডাইনিং-ক্যান্টিনে খেয়ে টাকা পরিশোধ না করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে হলগুলোতে ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবেই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে অ্যাখ্যা দিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদি সজিব বলেন, ‘হলে ছাত্রলীগের সিট দখল নতুন কিছু নয়। এমন ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতা নামক বটবৃক্ষের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে অভিযুক্তরা। একটি ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার মানে এমন অসংখ্য ঘটনার জন্ম নিতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করা।’ অবিলম্বে এদের লাগাম টেনে ধরে হলে যথাযথ সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নিকট দাবি জানান তিনি।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার আলিফ বলেন, ‘হলগুলোতে প্রতিনিয়ত ছাত্রলীগের দখলদারত্ব ও নির্যাতনের ঘটনায় হল প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার বিষয়টি প্রকাশ পায়। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মানুযায়ী সেশন টু সেশন আবাসিকতা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও হল প্রশাসন নিয়মিত আবাসিকতা দিতে আগ্রহী নয়। এ থেকে স্পষ্ট হয়, হল প্রশাসন নিয়মিত আবাসিকতা দিয়ে বৈধ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের হলে ওঠাতে আগ্রহী নয়। তারা উল্টো ছাত্রলীগকে সিট বাণিজ্য ও দখলদারত্বে সুযোগ করে দিচ্ছে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘বিষয়গুলো আমারাও দেখছি। একটি কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’