শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন

রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তর: সরকার গেলেও থেকে গেছে সিন্ডিকেট

প্রথম পাতা
প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন

সাবেক সরকার বিদায় নিলেও রাজশাহী খাদ্য অধিদপ্তরে বিদায় হয়নি দুর্নীতির সিন্ডিকেট। ঘুঁষ নিয়ে পদোন্নতি, পদায়ন ও অনৈতিক সব সুবিধাই পরিচালিত হচ্ছে আগের নিয়মেই, আগের সিন্ডিকেটের হাতেই !  সম্প্রতি দাপ্তরিক নীতিমালাকে উপেক্ষা করে বেশ কিছু পদোন্নতি ও বিশেষ বিশেষ চেয়ারে সিন্ডিকেটের সদস্যদের পদায়ন করার পর এমনই অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। 

জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর-২৪ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের সংস্থাপন শাখার এক প্রজ্ঞাপনে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী খেতুর রোড, এলএসডির উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো: ফারুক আব্দুল্লাহ’কে খাদ্য পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর ঠিক ১৭ দিন পর ১৩ নভেম্বর রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ  মাইন উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ফারুক আব্দুল্লাহকে রাজশাহী সদর এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। আবার ৩ দিন পরেই অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া, তমাল মিয়া ও গোলাম মোস্তফাকে উচ্চ গ্রেডের এলএসডি’তে পদায়ন করা হয়। তড়িঘড়ি করে এসব পদায়ন ও পদোন্নতিতে তাদের কাছ থেকে অগ্রীম ঘুঁষ নিয়ে রাখা হয়েছিল বলে সূত্র জানায়। এনিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তরে কর্মরত এসব পদে আাসার যোগ্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের বদলী/পদায়ন নীতিমালা -২০১৯ (সংশোধিত-২০২২) অনুযায়ী “খাদ্য পরিদর্শক/সমমান পদে সরাসরি নিয়োগ প্রাপ্তদের চাকরিকাল ন্যূনতম ০২(দুই) বছর এবং এলএসডি/সিএসডিতে উপখাদ্য পরিদর্শক পদে ন্যূনতম ০২(দুই) বছর কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পদোন্নতি প্রাপ্তদের ‘সি’ গ্রেডভুক্ত এলএসডিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা যাবে। ‘সি’ গ্রেডভুক্ত এলএসডিতে ন্যূনতম ০২(দুই) বছরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাকে ‘বি’ গ্রেডভুক্ত এলএসডিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা যাবে। ‘বি’ গ্রেডভুক্ত এলএসডিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ন্যূনতম ০২ (দুই) বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং বিধি মোতাবেক ৯ম গ্রেডে পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ‘এ’ গ্রেডভুক্ত এলএসডিতে সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা যাবে। তবে, ৯ম গ্রেডে সরাসরি নিযুক্ত এবং কমপক্ষে ০২(দুই) বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকগণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি প্রযোজ্য হবে না।

সূত্র জানায়, সাবেক সরকারের আমলে সাবেক খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, তার মেয়ে সোমা মজুমদার, রাজশাহীর তিনজন সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন তৎকালীন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, রাজশাহী জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ওমর ফারুক, টিসিএফ বর্তমানে সান্তাহার  সিএসডি’র ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম রুবেল, পরিদর্শক সমিতির বিভাগীয় সভাপতি আব্দুর রহিম, পরিদর্শক জুবিয়র পলক প্রমুখ। সূত্র মতে, অনুসন্ধানে নামলে সিন্ডিকেটের তালিকা আরও বাড়বে। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্যের অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরলে আলাদা আলাদা লোমহর্ষক কাহিনীতে রুপ নেবে।

খাদ্য অধিদপ্তর রাজশাহী আঞ্চলে কর্মরতদের মধ্যে নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফুড অফিসের একটি সিন্ডিকেট সাবেক খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সহ কয়েকজন এমপি ও নেতার সাথে যোগসূত্রতায় নানাবিধ অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে শতশত কোটি টাকা হাতিয়েছেন ৷ এই দূর্বৃত্তায়নের অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন রাজশাহীর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ওমর ফারুক, পরিদর্শক সমিতির বিভাগীয় সভাপতি আব্দুর রহিম, সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক মো: ফারুক আব্দুল্লাহ, উপপরিদর্শক মো: বাচ্চু মিয়া প্রমুখ। এই সিন্ডিকেটে থাকার পুরস্কার স্বরুপ বিভাগীয় পরিদর্শক সমিতির সভাপতি পদে রয়ে গেছেন আব্দুর রহিম, নীতিমালা ভঙ্গ করে মো: ফারুক আবদুল্লাহ’র পদোন্নতি/পদায়ন ও মোঃ বাচ্চু মিয়ার পদায়ন।

উপ-খাদ্য পরিদর্শক থেকে খাদ্য পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাওয়া মো: ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন, সম্পূর্ণ নীতিমালা মেনেই আমার পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছে। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খেতুর রোড গোদাগাড়ী এলএসডি সি’ গ্রেডের হলেও বি’ গ্রেডের ধরা হয়। তবে সিন্ডিকেটে সংশ্লিষ্টতার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে মো: মাইন উদ্দিন’কে না পেয়ে একাধিক ফোন নম্বর থেকে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও মেলেনি উত্তর।

সূত্র: ইন্টারনেট


আরো পড়ুন

মন্তব্য