কোথাও স্থাপন করতে না পেরে নামমাত্র মূল্যে ভাস্কর্য বিক্রি করেছেন শিল্পী
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার দু্ইটি ভাস্কর্য বানিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিন জোসি। কোথাও স্থাপন করতে না পেরে শেষে ভাঙারির দোকানে নামমাত্র মূল্যে ভাস্কর্য দুইটি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর বাজারের এক ভাঙারি ব্যবসায়ী আমিরুল মোমেনিনের স্টুডিও থেকে ভাস্কর্য দুটি কিনে এনেছেন। এখন বিনোদপুর বাজারে খোকন নামের ওই ব্যবসায়ীর দোকানের সামনে পড়ে আছে ভাস্কর্য দুটি।
খোকন আছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। কেউ না কিনলে ভাস্কর্য দুটি ভেঙে লোহা হিসেবে বিক্রি করবেন তিনি। দোকানটির নাম “খোকন আয়রন ঘর”।
ভাঙারি ব্যবসায়ী খোকন বলেন, “ভাস্কর্য দুটির ভেতরে পুরো লোহার বিম দিয়ে জালি করা আছে। বাইরের অংশটা এসএস পাইপ এবং স্টিল দিয়ে তৈরি। এটায় কখনো মরিচা ধরবে না। উচ্চতায় এটি প্রায় ১৮ ফুট।”
খোকন জানান, দুই লাখ টাকায় তিনি ভাস্কর্যটি বিক্রি করবেন।
তবে ভাস্কর আমিরুল মোমেনিন জোসি বলেন, “মাত্র ৯,৪০০ টাকায় ভাস্কর্য দুটি বিক্রি করেছেন তিনি। এটি তৈরিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০,০০০ টাকা।”
নগরীর মেহেরচণ্ডিতে লম্বা সময় ধরে নিজের স্টুডিওতেই ভাস্কর্য দুটি তৈরি করেন তিনি। কোথাও স্থাপন করতে না পেরে আক্ষেপ নিয়ে শেষে ভাঙারির দোকানে ভাস্কর্য দুটি বিক্রি করে দিয়েছেন।
আমিরুল মোমেনিন জোসি বলেন, “সারা দেশে আমার ও আমার স্টুডেন্টদের করা প্রায় ২০০ ভাস্কর্য ছিল। অনেক জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ছিল, সেগুলোও আমাদের হাতে করা। ৫ আগস্ট টেলিভিশনে দেখলাম, অনেক ভাস্কর্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা তো একজন শিল্পীর জন্য কষ্টের। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্যটি কোথাও বিক্রি করা সম্ভব না। কোথাও স্থাপন করা সম্ভব বলেও মনে করি না। তাই ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছি। এটা একজন শিল্পীর জন্য কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না।”
আমিরুল মোমেনিন আরও বলেন, “ওই ব্যবসায়ীকে বলেছিলাম ভেঙে লোহা হিসেবে যেন তিনি নিয়ে যান। কিন্তু তিনি অক্ষত অবস্থায় নিয়ে গিয়ে দোকানের সামনে ফেলে রেখেছেন। আমার কাছে ফোন আসছে। কষ্টটাও বাড়ছে।”