আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বহিরাগতদের নিয়ে রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির নিয়ন্ত্রণ নেন শামীম রেজা ওরফে হিটলার নামের এক দলিল লেখক। হামলা, ভাঙচুর ও অস্ত্রের মুখে আগের কমিটিকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিজে হয়ে যান সদস্যসচিব। এ ক্ষেত্রে নিজেকে বিএনপির লোক দাবি করেন তিনি।
তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিটলারের একটি ভিডিও এবং কিছু স্থির চিত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের জুনে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের নৌকা প্রতীকের পক্ষে মিছিলে অংশ নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন হিটলার।
এ ছাড়া হিটলার এবং তাঁর সহযোগীরা রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টুর অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের সঙ্গেও হিটলারের অনেক ছবি রয়েছে।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দলিল লেখক হিটলার ১৫ বছর ছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মী। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি ডিগবাজি দিয়ে স্বঘোষিত বিএনপির লোক হয়ে যান। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্বাচিত কমিটিকে সরিয়ে দিয়ে দখলে নিয়েছেন সমিতি। এ ঘটনায় দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলেও হিটলার এবং তাঁর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারাও বলছেন, হিটলার এবং তাঁর সহযোগীরা বিএনপির কেউ না। তাঁরা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁদের ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত হিটলারকে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পোস্টার সামনে নিয়ে ছবি তুলে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন। এখন নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিচ্ছেন তিনি।
দলিল লেখক সমিতির একাধিক সদস্য জানান, ৬ আগস্ট হিটলার বহিরাগত দুই শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের তাড়িয়ে দেন। ওই দিন রাতে সমিতির তখনকার সভাপতি মহিদুল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়। পরে সভাপতি মহিদুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক জাকাতুল্লাহ মলারসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সব সদস্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য ১৫ আগস্ট সাধারণ সভা ডাকা হয়। ওই সভায়ও বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে অবস্থান নেন হিটলার। সাধারণ সভায় সমিতির ১৪৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে মাত্র তিনজনের সমর্থনে আব্দুর রকিব বুলবুলকে আহ্বায়ক এবং নিজেকে সদস্যসচিব রেখে ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেন হিটলার। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দলিল লেখক সমিতির আহ্বায়ক কমিটির বর্তমান সদস্যসচিব শামীম রেজা ওরফে হিটলার বলেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কমিটি দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাকে জোর করে নৌকার মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি কোনো দিনই আওয়ামী লীগ করিনি। আমি বিএনপি করি। সেটি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির নেতাদের কাছে জানতে চাইলেই পাবেন। বিএনপি করার কারণে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে।’
হিটলার দাবি করেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগও বানোয়াট। আগের কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদত্যাগের পরেই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেটি রেজল্যুশনে লিপিবদ্ধও আছে। রেজল্যুশনে সাধারণ সদস্যরা স্বাক্ষরও করেছেন।
দলের নাম ভাঙিয়ে দলিল লেখক সমিতির কমিটি দখলের বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যথাযথভাবে জেনে তারপর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সূত্রঃ ইন্টারনেট