শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
Reel Hit Video slot On line Free No Obtain মোহনপুরে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে স্হানীয় শিল্প,পণ্য প্রদর্শনী,পিঠা উৎসব ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত সারাদেশে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন Tomb Raider dos Pokies Online because of the Microgaming Play Totally free Slot রাজশাহীতে তারুণ্যের উৎসবে ২০২৫ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন রাজশাহীতে শীতার্ত দু:স্থ অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিকে বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত মোহনপুরে সরকারি ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ টাউন ক্লাবের আয়োজনে শীত বস্ত্র বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপি‍‍`র কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

রাজশাহীতে বহুতল ভবনে বহুমুখী ঝুঁকি, নীরব আরডিএ

প্রথম পাতা
প্রকাশিতঃ শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে বহুতল ভবন নির্মাণে বহুমুখী ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ‘বিল্ডিং কোড’ না মেনে ভবন নির্মাণের কারণে নগরীর বাসিন্দারাই এসব ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। অনেক ভবনে এখনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। তবে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা একই পদে বহাল থেকে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, রাজশাহীতে ভবন নির্মাণের জন্য নকশার অনুমোদন দেয় আরডিএ। আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুই ক্যাটাগরিতে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়। ভবন নির্মাণে পৃথক অনুমোদন নিতে হয় ফায়াস সার্ভিস থেকে। এছাড়া বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে হোল্ডিং নম্বর ও ট্রেড লাইসেন্স দেয় সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে এসব অনুমোদনের আবেদন করতে হয়।

ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ সালের ৩ ধারা অনুযায়ী, বাড়ির পেছনে ও উভয় পাশে ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি করে জায়গা ছাড়তে হয়। অর্থাৎ দুটি বাড়ির মাঝে দূরত্ব থাকবে ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। আর ভবনের সম্মুখভাগে ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি জায়গা ছাড়া থাকতে হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এ কোড মানা হয় না।

আরোও পড়ুনঃ

“বাতীর নিচে অন্ধকার”, যার জীবন্ত উদাহরন রাজশাহী এডভোকেট বার এসোসিয়েশন

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এরিয়ায় ১২ হাজার ট্রেড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় ৫০০। গত কয়েক বছরে রাজশাহী নগরীতে প্রায় ১২০০টি ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সাততলা পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া ভবনসংখ্যা প্রায় এক হাজার ১০০। আর বাকি ১০০টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৮ তলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত। অভিযোগ উঠেছে, আরডিএ থেকে অনুমোদনের জন্য আবেদনের পর কর্মকর্তাদের খুশি করলেই কাঙ্ক্ষিত প্ল্যান পাস করানো যায়। এক প্ল্যানের অনুমোদন নিয়ে অন্য প্ল্যানে (বাড়তি তলা) নির্মাণ করলেও পরে আর তদারকি করে না আরডিএ।

তথ্য বলছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই আরডিএ ভবনে দুর্নীতি দমন কমিশনের চার সদস্যের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। নওদাপাড়া এলাকায় আরডিএ ভবনের আশপাশে ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়েছিলেন টিমের সদস্যরা। এরপর নিচতলায় অথরাইজড শাখায় অভিযান চালিয়ে অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদকে দীর্ঘ সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে প্ল্যান পাশের রেজিস্টার বইসহ সংশিষ্ট বিষয়ে নথিপত্র জব্দ করে দুদক।

ফায়াস সার্ভিস বলছে, বেশিরভাগ বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তারা সতর্ক করলেও ভ্রুক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট মালিকদের। রাজশাহী বিভাগের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নইমুল আহছান ভূঁইয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছি। বলতে গেলে, রাজশাহীর প্রায় সব ভবনই ঝুঁকিপূর্ন। বিল্ডিং কোডের বিষয়টি আরডিএ দেখে। আমরা অগ্নিনির্বাপণ দেখে থাকি। এসব নিয়ে আমরাও বেশ ঝুঁকিতেই রয়েছি।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ও বাণিজ্যিক- এই তিন ক্যাটাগরিতে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো ভবন নির্মাণের কাজ করে। এসবের মধ্যে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় বেশিরভাগ কাজ পেয়ে আসছিল পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ সরকারের রাজশাহী সিটির মেয়র ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। ক্ষমতা খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ শেষ করেছে তারা। এতে নিরাপত্তাঝুঁকিতে নগরীর বাসিন্দারা।

নগরীর বিলসিমলা এলাকার বহরমপুর মৌজায় ৩৩৭ দাগে পৌনে এক কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। অভিযোগ উঠেছে, তার নির্মাণ করা চার তলা ভবন অবৈধ। জমিটি তার নয়। এছাড়া বিল্ডিং কোডও মানেননি তিনি। লিয়াকত হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জমিটি তার দাবি করে রবিউলের বিরুদ্ধে আরডিএতে অভিযোগ করেছেন।

লিয়াকত হোসেন বলেন, পুলিশ অফিসার রবিউল ও তার ভাই রবিন আওয়ামী লীগের কমিটিতে ছিলেন। ক্ষমতার দাপটে আমার জায়গায় নকশা ছাড়াই অবৈধভাবে কাজ করেছেন তারা। তবে পুলিশ কর্মকর্তা রবিউলের দাবি, সব কাগজপত্র ঠিক রয়েছে। নিয়ম মেনেই তিনি কাজ করেছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী প্রধান আহমদ শফি উদ্দিন ঢাকা মেইলকে বলেন, এভাবে ভবন নির্মাণ বেঁচে থাকার জন্য ঝুঁকির কারণ। যেকেনো সময় রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটলে তখন কিছু করার থাকবে না। সেজন্য আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবাদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্য বলছে, ২০০৫ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত এক গেজেট থেকে মাস্টারপ্ল্যানে নগরীর রেলগেট থেকে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণে সরকারের একটি প্রকল্প ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০০৯ সালে দুটি বহুতল ভবন ভেঙে ফেলতে হয়। তবে সাড়ে চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ভবন দুটির মালিককে। আর্থিক সুবিধা নিয়ে আরডিএ থেকে বহুতল ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন ও ছাড়পত্র প্রদানের ফলে সরকারের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ক্ষতি সাধন হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে দুদক অভিযোগ অনুসন্ধান করে।

আরডিএ’র অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এসবের অন্যতম হোতা বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রের তথ্যমতে, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আবুল কালাম আজাদ প্ল্যানিং সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন। নির্ধারিত ফি ছাড়াও তাকে দিতে হয় মোটা অংকের উৎকোচ। আরডিএতে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য তিনি। ২০০৭ সালে ঘুষ গ্রহণের সময় তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

সূত্র জানিয়েছে, আবুল কালাম আজাদ নগরীর ভদ্রা আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন। ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। একাধিক প্লট রয়েছে তার। বৃহস্পতিবার ঢাকা গিয়ে রোববার রাজশাহী এসে অফিস করেন আজাদ। যাতায়াত করেন বিমানে। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত কাজে।

এসব বিষয়ে জানতে আরডিএ কার্যালয়ে গিয়ে আবুল কালাম আজাদকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আরডিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মোহম্মদ রহমতুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, যেকোনো বিল্ডিং অনুমোদনের পূর্বে আবেদন জমা দিতে হয়। আবেদন পর্যালোচনা করার জন্য কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ার আছেন, তিনি দেখভাল করে অনুমোদন করেন। সেই অনুমোদন অনুসারে মালিকরা ভবন করছেন কি না, সেটি দেখার জন্য বিল্ডিং ইনসপেক্টর পদে কিছু কর্মচারী আছে; তারা এটা সময়ে সময়ে দেখভাল করেন। অনুমোদন ছাড়া কেউ বিল্ডিং করলে বিল্ডিং ইনসপেক্টর অথরাইজড অফিসার দেখেন। এর বাইরে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, আমরা প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করি, যাতে বিল্ডিংগুলো নিয়ম মেনে তৈরি হয়। এছাড়া অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করি, করে আমাদের বিল্ডিং অনুমোদন কমিটি আছে, সেই কমিটিতে উপস্থাপন করি। তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেন।

সার্বিক বিষয়ে আরডিএ’র চেয়ারম্যান এস. এম. তুহিনুর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

ঢামেল/অন/৩৪


আরো পড়ুন

মন্তব্য