শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
Reel Hit Video slot On line Free No Obtain মোহনপুরে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে স্হানীয় শিল্প,পণ্য প্রদর্শনী,পিঠা উৎসব ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত সারাদেশে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন Tomb Raider dos Pokies Online because of the Microgaming Play Totally free Slot রাজশাহীতে তারুণ্যের উৎসবে ২০২৫ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন রাজশাহীতে শীতার্ত দু:স্থ অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিকে বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত মোহনপুরে সরকারি ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ টাউন ক্লাবের আয়োজনে শীত বস্ত্র বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপি‍‍`র কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

রাজশাহীতে খাসপুকুর ইজারায় ‘চুরি

প্রতিবেদকঃ
প্রকাশিতঃ শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজায় সাড়ে ছয় একরের চেয়ে বড় একটি পুকুর ইজারা দিতে তালিকা প্রকাশ করে প্রশাসন। তালিকায় খাস-খতিয়ানভুক্ত পুকুরটির ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। তখন ‘মামলা আছে’ উল্লেখ করে পুকুরটির ইজারা বন্ধ করে দেয় কমিটি। পরে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গোপনে পুকুরটি ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকায়।

শুধু একটি পুকুর নয়, গোদাগাড়ীতে ইজারার জন্য প্রকাশিত তালিকার ২ হাজার ৭৪৯টি খাস পুকুরের মধ্যে দুই শতাধিক পুকুর ইজারা দেওয়ার জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ভুয়া চালান দেখিয়ে, ইজারা মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক কম মূল্যে দলিল করে, মামলার নিষেধাজ্ঞার কথা বলে ও তালিকা বহির্ভূত রেখে গোপনে এসব পুকুর ইজারা দেওয়া হয়। ১৪৩১ থেকে ৩৩ বঙ্গাব্দের দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে একটি মহল এ জালিয়াতি করে। এতে তিন বছরে অন্তত ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

জালিয়াতি করে কম টাকায় ইজারা নেওয়া ব্যক্তিদের দাবি, তাঁরা বৈধভাবে পুকুর ইজারা নিয়েছেন। তাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র আছে। অন্যদিকে সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে জালিয়াতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় সরকারি হিসাবমতে তিন হাজার ৬০টি খাস পুকুর। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৪৯টি পুকুর ইজারা দিতে গত ১৮ এপ্রিল তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে প্রতিটি পুকুরের সরকার-নির্ধারিত ইজারামূল্যও উল্লেখ করা হয়। এই মূল্যের নিচে ইজারা দেওয়ার বিধান নেই। ইজারা অনুমোদনের তালিকায় সই করা হয় গত ৩০ মে। এরপর ১৫ দিনের মধ্যে দরপত্র দাখিলকারীরা আপিল করতে পারেন। কিন্তু অনুমোদিত তালিকা উন্মুক্ত করা ২০ জুন। দেরিতে তালিকা প্রকাশ করায় আগ্রহী দরপত্র দাখিলকারীদের অনেকে বঞ্চিত হন।

প্রকাশিত তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ দাগে ১ দশমিক ৮৬ একরের একটি পুকুরের অনুমোদিত ইজারামূল্য ছিল সাড়ে ৭০ হাজার টাকা। ভ্যাট ও আয়কর ১৭ হাজার ৬২৫ টাকাসহ সর্বসাকল্যে পুকুরটির ইজারা মূল্য দাঁড়ায় ৮১ হাজার ৭৫ টাকা। সেই পুকুরটির বিপরীতে মাত্র ৭ হাজার ৫০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দেওয়া হয়েছে। শুধু এই পুকুর থেকে এক অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ৭৪ হাজার ২৫ টাকা।

একইভাবে তালিকা বিশ্লেষণ করে মোট ১০৬টি পুকুর ইজারার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কম মূল্যের ট্রেজারি চালান ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে এক বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা। তিন বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কম মূল্যের ট্রেজারি চালান ছাড়াও ভুয়া চালান কিংবা পুরোনো চালানো ব্যাংকের সিলমোহর জাল করে পুকুর ইজারা নেওয়া হয়েছে। উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের তেরপাড়া মৌজার ১৮৪ নম্বর দাগের ২ একর ২৮ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর ইজারার জন্য ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ট্রেজারি চালান দেখানো হয়। সোনালী ব্যাংকের গোদাগাড়ী শাখার ওই চালান নম্বর ৬, তারিখ ২৪ জুন ২০২৪। কিন্তু উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া মৌজার ২৪৯ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৮ শতাংশের পুকুরটি ইজারার ক্ষেত্রে একই চালান ব্যবহার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পুকুরের জন্য সরকারের হিসাবে কোনো টাকা জমা হলো না। এভাবে মোট ৯৬টি পুকুরের ক্ষেত্রে চালান জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এসব পুকুর থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায়নি। এই পন্থায় এক বছরে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তিন বছরের ইজারার জন্য সরকারের ক্ষতি ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাগুয়ান মৌজায় সোয়া ৪ একর, ৬ দশমিক ৬৪ একর ও প্রায় দেড় একরের তিনটি বড় খাস পুকুর আছে। পুকুরগুলো ইজারা দিতে প্রথমে ইজারামূল্য দিয়ে তালিকা প্রকাশ করা হলেও পরে ‘মামলা আছে’ উল্লেখ করে ইজারা অনুমোদন দেয়নি কমিটি। এ জন্য কেউ দরপত্র জমা দেননি। কিন্তু ইজারা মূল্যের চেয়ে অনেক কমে গোপনে ওই পুকুরগুলো দলিল করে দেওয়া হয়েছে। সোয়া ৪ একরের পুকুরটির ইজারামূল্য ছিল ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ টাকা। সেটি গোপনে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৬ একরের পুকুরটির ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ সাড়ে ৯২ হাজার টাকা, ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকায়। আর দেড় একরের পুকুরটির ইজারামূল্য ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা, ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধু এক অর্থবছরে তিনটি পুকুর থেকে ভ্যাট ও আয়করসহ সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৬৬ লাখ ১৩ হাজার ৩১২ টাকা। তিন বছরে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৬ টাকা। তিনটি পুকুরেই একই ব্যক্তি ট্রেজারি চালান জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া ইজারামূল্যের চেয়ে অসম্ভব কম মূল্যে ৪৯টি পুকুর ইজারা দিয়ে সরকারের এক বছরের রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ১১৭ টাকা। তিন বছরের জন্য এই ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকা। আবার উপজেলার ১৩টি পুকুর ইজারার জন্য অনুমোদিত তালিকায় নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে পুকুরগুলোর ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ইজারামূল্য পরিশোধের তথ্য পাওয়া গেছে।

৪ ডিসেম্বর সাগুয়ান গ্রামে সাড়ে ছয় একরের পুকুরটির খোঁজ নিতে গিয়ে হাবিব (৬২) নামের স্থানীয় এক কৃষকে পুকুরপাড়ে পাওয়া যায়। জানালেন, কয়েকজন ভাগে পুকুরটা খান। তাঁদেরই একজন গোদাগাড়ীর মাদারপুরের শামীম। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে শামীম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বৈধভাবে পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন। তাঁর কাছে বৈধ কাগজপত্র আছে।

গোদাগাড়ীতে এসব পুকুর ইজারা দেওয়ার সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি এখন পবায় কর্মরত। সাগুয়ান গ্রামের পুকুরের ব্যাপার তিনি বলেন, ওই পুকুর তিনি ইজারা দেননি। অবশ্য ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ইউএনও আবুল হায়াত নিশ্চিত করেছেন যে, ভূমি অফিসের ওই পুকুর ইজারা দেওয়ার দলিল পাওয়া গেছে। সেখানে এসিল্যান্ডের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর জাহানাবাদ মহল্লার শরিফুল ইসলাম ওরফে বিষুর নেতৃত্বে এ জালিয়াত চক্র কাজ করেছে। তিনি কারাগারে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামানের মাধ্যমে এসব কাজ হয়। তিনি বর্তমানে চারঘাটে কর্মরত। জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, তিনি কিছুই জানে না।কমিটির মাধ্যমে পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে।

ইজারা কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন ইউএনও ইউএনও আতিকুল ইসলাম। তিনি এখন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় কর্মরত। বর্তমান ইউএনও আবুল হায়াত প্রথম আলোকে বলেন, জালিয়াত চক্রের হোতা শরিফুল কারাগার থেকে বের হলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামানকেও ডাকা হবে।

এক দিন পর ইউএনও আবুল হায়াত ফোন করে বলেন, সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামান এবং ওই সহকারী কমিশনারকে ডেকেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, মামলা চলা পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া হয়নি। যারা দখল করে আছেন, তাঁরা জাল দলিল বানিয়ে জমা দিয়ে গেছেন। কর্মচারীরা দলিল ফেরত নিতে বললেও তাঁরা নেন না। প্রশাসন কেন দখলমুক্ত করছে না জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

 

পিআলো/জা/০১


আরো পড়ুন

মন্তব্য