বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে কথা রাখেননি আলুর পাইকাররা

প্রথম পাতা
প্রকাশিতঃ বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেননি স্থানীয় পাইকারী ব্যবসায়ীরা। রাজশাহীতে হিমাগার খালি করা আলু খুচরায় ৪৫ টাকা কেজি দামে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩৯ টাকা কেজি দামে কিনেছিলেন তারা। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজশাহীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পুরাতন আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং নতুন আলু ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়েছে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারণে রাজশাহীতে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। অভিযান অব্যাহত থাকলে আলুর দাম আরো কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীরা।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে ৪৩টি হিমাগার রয়েছে। এসব হিমাগারে প্রায় ৮৫ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বস্তায় আলু থাকে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি। এখনো অনেক হিমাগারে আলুর মজুত রয়েছে। এসব হিমাগারের মধ্যে গত ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠ পবা উপজেলার দুটি হিমাগার থেকে ২ হাজার ৬০৬ বস্তা আলু বের করে ৩৯ টাকা কেজি দামে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পাইকারী ব্যবসায়ীরা ঐ আলু খুচরা বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দামে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আলু রাজশাহী খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সাহেববাজার খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পুরোনো আলু ৬৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, সরকার পাইকারি বাজারে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে আলু মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছিল। তারা বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করছিল। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের যোগসাজশে আলুর দাম বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। হিমাগার থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে রাজশাহী শহরের খুচরা বাজারে ৪৫ টাকার পরিবর্তে আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দামে। তিনি জানান, গত ১৫ ও ১৭ ডিসেম্বর হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মোট ২ হাজার ৬০৬ বস্তা আলু ৩৯ টাকা কেজি দামে বিক্রি করা হয়েছে। আলুর বাজারে কয়েক দফা মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ঠেকাতে সম্প্রতি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মজুত আলু ৩০ নভেম্বরের পর হিমাগারে রাখা যাবে না-এমন আদেশও দিয়েছে সরকার। কিন্তু পবার কয়েকটি হিমাগার নির্ধারিত সময়ের পরও বিপুল পরিমাণ আলু মজুত করে রেখেছিল।

জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান পবার নওহাটা পৌরসভা এলাকার আলাইবিদিরপুর এলাকার আমান কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে প্রতিটি ৬০ কেজির ৩০৬ বস্তা আলু খোলা বাজারে ৩৯ টাকা কেজি দামে বিক্রি করেন। ঐ টাকা আলুর মালিককে দেওয়া হয়। এর এক দিন পর ১৭ ডিসেম্বর একই এলাকার রহমান ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে দুই হাজার ৩০০ বস্তা আলু বের করে বিক্রি করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব বলেন, ২ হাজার ৬০৬ বস্তা আলু জব্দ করেন। খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে আলু সরকারি ৩৯ টাকা কেজি দামে কিনে নিয়ে যান। যাদের কাছে আলু বিক্রি করেছেন তাদের ফোন নম্বর রেখে দিয়েছেন। এই আলু ভোক্তাদের কাছে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। তারা যেখানে আলু বিক্রি করবেন, সেখানে তারা তদারকি করবেন। যদিও এ পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব না। তার পরও তারা করবেন।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী জেলায় ৪৩টি হিমাগার আছে। এতে সংরক্ষণ বা মজুত করা যায় প্রায় ৮৫ লাখ বস্তা আলু। প্রতি বস্তায় আলু থাকে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি। এখনো অনেক হিমাগারে আলু মজুত আছে। পর্যায়ক্রমে সব হিমাগার পরিদর্শন করা হবে। আমাদের দায়িত্ব হিমাগারের মজুত খালি করে দেওয়া। ইতিমধ্যে দুটি হিমাগার খালি করে ফেলা হয়েছে।

 

ইফাক/জা/১২


আরো পড়ুন

মন্তব্য