বাড়ির মালিক এক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকায় থাকেন। রাজশাহীতে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া থাকত। এরই মধ্যে ভাড়াটে না থাকার সুযোগে ১ মে থেকে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাতের বেলা বাড়ির মূল্যবান আসবাব, স্বর্ণালংকার, জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও ৫ আগস্ট থানা পুড়িয়ে দেওয়ায় অভিযোগপত্র হারিয়ে যায়। গত মাস থেকে নতুন করে বাড়িটির দরজা-জানালা লুট করে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
রাজশাহী নগরের আলীগঞ্জ এলাকার ওই বাড়ির মালিক সাজিয়া হাসান। তিনি তাঁর স্বামী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মির্জা কামরুল হাসানের সঙ্গে ঢাকায় থাকায় বাড়িটি ভাড়া দেওয়া থাকত। খবর পেয়ে রাজশাহীতে গিয়ে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পারেন, প্রতিবেশী কয়েকজন ব্যক্তি বাড়ির এসব মালামাল লুট করেছেন।
সাজিয়া হাসানের দাবি, প্রতিবেশী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই লুটের মালামাল পাওয়া যাবে। বাড়ির আগের ভাড়াটে এখন ওই বাড়ির পাশে আরেকটি বাড়িতে থাকেন। তিনি তাঁকে (সাজিয়া) জানিয়েছেন, এক দিন রাতে টের পেয়ে এসে অভিযুক্তদের মালামাল নিয়ে যেতে দেখে নিষেধ করলেও তাঁরা শোনেননি। রাতের পর রাত বিভিন্ন জিনিস চুরি করা হয়েছে।
সাজিয়ার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাড়িতে ভাড়াটে না থাকার সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ১ মে থেকে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাতের বিভিন্ন সময়ে বাড়ির তালা ভেঙে ঘরে থাকা মূল্যবান আসবাব, স্টিলের আলমারি, সোফা, ড্রেসিং টেবিল, শোকেস, ডাইনিং টেবিল, বইপত্র, জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুট করা হয়েছে। এ ছাড়া বাড়ির বাইরের ফটকের স্টিলের দরজা, সাবমারসিবল পানির পাম্প, একটি বাণিজ্যিক মিক্সচার মেশিন, সাইকেল ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে নগরের রাজপাড়া থানায় একটা মামলা করেন সাজিয়া হাসান। মামলায় প্রতিবেশী আসামি মেরাজ (৩০), আবদুল্লাহ (২৫), আলামিন (২৮), রাকিবসহ (৩০) ও অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়। ৫ আগস্ট থানা পুড়ে যাওয়ায় মামলার কাগজপত্র পুড়ে যায়। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ সুযোগে আবার ৫ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে লোহার দুটি গ্রিল খুলে নেন মেরাজ। প্রতিবেশীরা দেখে তা আটকে দেন। বর্তমানে গ্রিল দুটি প্রতিবেশী বদরুলের কাছে আছে। পরদিন ৬ অক্টোবর একই সময়ে টয়লেটের একটি রঙিন কাচের দরজা মেরাজ নিয়ে যান।
রোববার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দেয়াল ভেঙে দরজা–জানালা খুলে নিয়ে যাওয়ার কারণে বাড়ির এক পাশ দিয়ে অন্য পাশ দেখা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে প্রতিবেশী আহমদ আলীকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এই বাড়িতে সব মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। লোকজন লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। একটা আলমারি এত ভারী ছিল যে ছয়জন মিলে ধরে নিয়ে গেছে।
সাজিয়ার স্বামী মির্জা কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ বলেছে, ৫ আগস্ট থানা পুড়ে যাওয়ায় এজাহার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ঢাকা থেকে আরেকটি এজাহার লিখে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফোন করলে তাঁকে সশরীর যেতে বলেছে।
জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম বলেন, তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর এখানে যোগদান করেন। এ রকম একটা ঘটনার কথা শুনেছেন। পরবর্তী সময় অভিযোগ করার জন্য বাড়ির মালিককে সশরীর আসতে বলা হয়েছে। শুধু অভিযোগ করলে তাঁরা দেখতে পারেন বিষয়টা। কিন্তু মামলা করতে হলে তাঁকে সশরীর আসতে হবে।
সূত্র: ইন্টারনেট