রাজশাহী বিভাগে রুই-কাতলসহ কার্প জাতীয় মাছ চাষে বিপ্লব ঘটেছে। ৮ জেলায় বছরে উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাছ। লাভজনক হওয়ায় আগ্রহও বাড়ছে চাষিদের। মৎস্য বিভাগ বলছে, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সুবিধা দেয়ায় মাছ চাষে পরিবর্তন ঘটেছে এ অঞ্চলে।
পাঁচ বছর ধরে রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় ২৫ হাজারের বেশি পুকুরে চলছে মাছ চাষ। প্রতিটি পুকুরই রুই-কাতলসহ কার্প জাতীয় মাছে ভরা। প্রতিবছর জেলার উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ৮৭ হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রাজশাহী বিভাগ।
নাটোরে প্রতিবছর পুকুর ও উন্মুক্ত জলাশয় থেকে বছরে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। পাবনায় এ বছর মাছ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। রেণু ও পোনা উৎপাদন এবং মাছের খামারের মাধ্যমে গত তিন দশকে বদলে গেছে বগুড়া জেলার অর্থনীতির চেহারা।
মাছ চাষিরা বলেন, মাছের উৎপাদন বাড়ায় বাজারে কমছে মাছের দাম। বিভাগে চাষকৃত মাছ বিদেশে রফতানি বাড়ানো গেলে চাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবে। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালি পদ বলেন, বগুড়ার উৎপাদিত মাছ এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলা এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মাছ রফতানি করা হচ্ছে।
এদিকে সিরাজগঞ্জে কম সময়ে বেশি লাভের আশায় অনেকেই ঝুঁকছেন মাছ চাষে। তাড়াশ উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের চাষ হচ্ছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে।
সিরাজগঞ্জ তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, তাড়াশ এলাকার মাটি মাছ চাষের জন্য উপযোগী। এতে চাষিরা প্রতি বিঘায় ৩০-৫০ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন।
তবে খাবারের দাম ও নানা প্রতিবন্ধকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক কৃষক। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, চাষিরা নিজেরাই খাবার তৈরি করতে পারলে কমবে মাছ উৎপাদনের খরচ, বাড়বে লাভ।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কৃষকদেরকে মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলতে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে প্রণোদনাও।
রাজশাহী বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াহেদ মণ্ডল বলেন, মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক লাভবান হতে পারছেন না। তবে চাষিরা নিজেরাই খাবার তৈরি করতে পারলে কমবে মাছ উৎপাদনের খরচ কমানো সম্ভব।
মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় ৩ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর পুকুর, জলাশয়, নদী ও খাল বিল থেকে বার্ষিক ৫ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। এর সঙ্গে জড়িত প্রায় আড়াই লাখ চাষি।