শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
Reel Hit Video slot On line Free No Obtain মোহনপুরে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে স্হানীয় শিল্প,পণ্য প্রদর্শনী,পিঠা উৎসব ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত সারাদেশে সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন Tomb Raider dos Pokies Online because of the Microgaming Play Totally free Slot রাজশাহীতে তারুণ্যের উৎসবে ২০২৫ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন রাজশাহীতে শীতার্ত দু:স্থ অসহায় মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিকে বিদায় সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত মোহনপুরে সরকারি ডিগ্রি কলেজে নবীন বরণ বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ টাউন ক্লাবের আয়োজনে শীত বস্ত্র বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপি‍‍`র কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ভেজাল খেজুর গুড়ে রাজশাহীর বাজার সয়লাব, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রথম পাতা
প্রকাশিতঃ শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০০ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে চলতি শীত মৌসুমে দেড়শ কোটি টাকার খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই হিসাব পরিশুদ্ধ খেজুর গুড়ের। কিন্তু রাজশাহীতে ব্যাঙের ছাতার মতো শত শত কারখানায় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যহানিকর খেজুরগুড়। এই খেজুর গুড়ে নেই খেজুরের রস। এ গুড়ের উপাদান ঝোলা গুড়, অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি-গুড়, রং, আটা, রাসায়নিক ও ভেষজ নির্যাস। রাজশাহীতে প্রতি বছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে গুড় উৎপাদন।

রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলার আনাচকানাচে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরির এসব কারখানা। প্রতিদিন শত শত মণ গুড় রাজশাহীর আশপাশের জেলাসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে যেমন রাজশাহীর গুড়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীত এলেই রাজশাহীর এক শ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কারিগরদের ভাড়া করে ভেজাল খেজুরের কারখানা খুলে বসেন। রাতারাতি প্রতিটি কারখানায় ২০০-৩০০ কেজি গুড় তৈরি করা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর বাঘা উপজেলার আড়ানী দিয়াড়পাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৬০০ কেজি ভেজাল খেজুর গুড়, নিম্নমানের অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি-গুড় ও রাসায়নিক দ্রব্য ধ্বংস করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে চারঘাটে ১ লাখ ৮০ হাজার ২৭৫টি, পুঠিয়ায় ৫ লাখ ৭০ হাজার ১২৫টি ও বাঘায় ১ লাখ ২০ হাজার ৫১২টি খেজুরগাছ রয়েছে। তবে প্রতি বছরই এসব উপজেলায় গড়ে ৪-৬ হাজার গাছ কমছে।

 

এই তিন উপজেলা সংলগ্ন রাজশাহীর সবচেয়ে বড় খেজুর গুড়ের হাট বসে পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে। প্রতিদিন এই হাটে প্রায় ১০০ থেকে ১১০ টন এবং সপ্তাহে দুদিন বড় হাটে ১২০ থেকে ১৫০ টন গুড় আমদানি হয়। এ ছাড়া চারঘাটের বাঁকড়া ও নন্দনগাছী, বাঘার বিনোদপুর, মনিগ্রাম ও আড়ানী এবং পুঠিয়ার ঝলমলিয়া হাটে শত শত টন গুড় কেনাবেচা হয়।

প্রতিদিন ভোর থেকে ভ্যান, নছিমনসহ বিভিন্ন যানবাহনে আশপাশের এলাকা থেকে এই হাটে গুড় আমদানি হয়। কিন্তু কী দিয়ে তৈরি হচ্ছে এত খেজুরের গুড়? আর এ গুড়ে কি খেজুরের রস থাকে? এসব প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।

সরেজমিন চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আনাচকানাচে গড়ে উঠেছে খেজুর গুড় তৈরির কারখানা। সেখানে টিনের কড়াইয়ে ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ভর্তি টিন কেটে পিচ পিচ করা হচ্ছে। সেই কড়াইয়ে দেওয়া হচ্ছে ১০-১২ কেজি ঝোলা খেজুর গুড়। কিছুক্ষণ জ্বাল দেওয়ার পর অপরিশোধিত চিনি-গুড়ের দলা ঝোলা গুড়ের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তখন মেশানো হচ্ছে খেজুর গুড়ের নির্যাস, রং, রাসায়নিক দ্রব্য ও আটা। এভাবেই তৈরি হচ্ছে খাঁটি খেজুরের গুড়। দিন-রাত প্রকাশ্যেই চলছে ভেজাল মেশানোর কাজ।

টিনভর্তি অপরিশোধিত এসব চিনি-গুড় ভারত থেকে আমদানি করা হয় দাবি কারখানা মালিকদের। তারা বলেন, গত বছর থেকে গুড় তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে প্রতি মণ গুড় তৈরিতে খেজুর রস কিংবা ঝোলা গুড়ের সঙ্গে ৫-১০ কেজি চিনি দেওয়া হতো। এখন প্রতি মণ গুড়ে ভারতীয় এসব অপরিশোধিত চিনি-গুড়ের পুরো এক টিন দেওয়া হয়। প্রতিটি টিনে প্রায় ২২ কেজি উপকরণ থাকে। একটি টিনের সঙ্গে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়, আটা ও রাসায়নিক মেশালেই এক মণ গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনি–গুড় ৭০-৮০ টাকা, কিন্তু বাজারের খেজুরের গুড় ১৮০-২০০ টাকা। তাতে তিন গুণ লাভ করা সম্ভব।

প্রকৃত খেজুর গুড় তৈরির কারিগররা বলছেন, প্রাকৃতিক কারণেই খেজুর গাছে আগের মতো রস হয় না। রসের পরিমাণ কম হওয়ায় খাঁটি গুড় তৈরি করা কষ্টসাধ্য। গুড়ের পরিমাণ বাড়াতে অনেকে রসের সঙ্গে অর্ধেক পরিমাণ চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছেন। তাতেও খেজুরের রসের স্বাদ কিছুটা পাওয়া যায়। কিন্তু কারখানা মালিকরা গাছিদের কাছ থেকে রস ও ঝোলা গুড় কিনে নিয়ে কারখানায় যে গুড় তৈরি করছে, তাতে রাসায়নিক ভেষজের কারণে ঘ্রাণ থাকলেও স্বাদ নেই। ভেজাল গুড়ে বাজার সয়লাবের কারণে আসল গুড়ের কদর নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে চাষিরা গুড় তৈরি না করে কারখানাগুলোর কাছে রস ও ঝোলা গুড় বিক্রি করে দিচ্ছেন।

চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ভেজাল গুড়ে ভেজষ নির্যাস মেশানোর কারণে আসল গুড়ের চেয়ে ঘ্রাণ বেশি। বাজারে আসল ও ভেজাল সব গুড়ের একই দাম। বরং আসল গুড় তৈরি করা কঠিন কাজ। এজন্য গুড় তৈরি না করে রস লিটারের দামে ও ঝোলা গুড় কেজি হিসেবে কারখানাগুলোর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। কারখানাগুলো অগ্রিম টাকা দিয়ে রস ও ঝোলা গুড় কিনছে।

বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকার খেজুর গাছি রফিকুল ইসলাম বলেন, খেজুর গুড়ের সেই স্বাদ ও গন্ধ আর নেই। কারখানাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা টিকতে পারছি না। আমরা ১০ কেজি গুড় তৈরিতেই ক্লান্ত, অথচ তারা প্রতিদিন ৫-১০ মণ গুড় তৈরি করছে। প্রশাসন অভিযান চালালেও পরদিনই আবার চালু হয় কারখানা।

অনলাইনে অর্গানিক গুড় বিক্রেতা ওবাইদুর রহমান বলেন, গত পাঁচ বছর হলো অনলাইনে গুড় বিক্রি করি। আগে রাজশাহীর নাম শুনলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন, কিন্তু এখন ক্রেতারা প্রতারিত হয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন। আমরা চাষিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসল গুড় তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিই। কিন্তু বাজারে থাকা ভেজাল গুড়ের সঙ্গে দামের পার্থক্য থাকায় অনেকেই নিতে চান না।

পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের পাইকারি গুড় ব্যবসায়ী সুফেল রানা বলেন, গুড় পাইকারিভাবে কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাই। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ভেজাল গুড় তৈরির কারণে রাজশাহীর কোটি কোটি টাকার গুড়ের ব্যবসা এখন ক্ষতির মুখে। প্রতি বছরই গুড়ের বাজার বড় হচ্ছে, কিন্তু সুনাম হারাতে বসেছে এ অঞ্চলের গুড়। ভেজাল চলতে থাকলে রাজধানীসহ বড় বাজারগুলোতে রাজশাহীর গুড় অচল হয়ে পড়বে।

এদিকে ভেজাল গুড় তৈরির কারখানাগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়ার মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে আড়ত। ভারতীয় টিন আমদানিকারক চারঘাটের পরানপুর এলাকার মজনু আলী বলেন, মানুষের খাবারের জন্যই টিনের প্যাকেটে থাকা সেমি লিকুইড গুড় আমদানি করি। দেখতে অনেকটা চিনির দলার মতো। কারখানাগুলো এই টিন কিনে নিয়ে গিয়ে কী করে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না।

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, গুড়ের সঙ্গে কোনো কিছু মেশানো ঠিক না। কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় খেলে আলসার, ডায়রিয়া, কলেরাসহ পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুদের কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে শিশুরা কিডনি, হার্ট, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগেও আক্রান্ত হতে পারে।

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, খেজুরগাছের সংখ্যা কমলেও গুড়ের উৎপাদন বেড়েছে। কারখানাগুলোতে নিম্নমানের সাদা ও লাল রঙের অপরিশোধিত চিনি-গুড় মেশানো হচ্ছে। এতে গুড়ের কোনো গুণগত মান থাকছে না। এতে এই অঞ্চলের প্রকৃত খেজুর গুড় উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গুড়ের সুনাম ডুবতে বসেছে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, ভেজাল গুড় তৈরি বন্ধে চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া এলাকায় অনেকগুলো পরিচালনা করেছি। নতুন কিছু কারখানার তথ্য পেয়েছি। সে অনুযায়ী খুব দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

কাবলা/জা/২৫


আরো পড়ুন

মন্তব্য