কোন একদিন এক রিমোট কন্ট্রোলেই ঘুরবে দৈনন্দিন কার্যকলাপের চাকা। বেকার হয়ে পড়বে প্রযুক্তি জ্ঞানহীন অদক্ষ জনশক্তি।আজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের দ্বারপ্রান্তে কড়া নাড়ছে।প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বৈপ্লবিক পরিবর্তনকেই বলা হচ্ছে ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’। সহজ কথায় ‘ডিজিটাল রেভল্যুশন’ বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি হাতে কলমে সেটাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।
কাজেই আগামীর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বৈশ্বিক সমাজের সঙ্গে মোকাবিলায় কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে তুলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা গেলে তা নিঃসন্দেহে আগামীতে বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর করে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে আমাদের যে কর্মসংস্থান হয়েছে তা যতেষ্ঠ নয়। নতুন করে আরো অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এই জায়গাটি কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন প্রচুর প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ। টেকসই উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে কারিগরি শিক্ষাই শুধু পারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে।
আমরা এটা ভাবনো যে কারিগরি শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষা দুইটি দুই মেরুর বিষয় । একটি আর একটির সাথে সম্পর্কিত। কোনও দেশ কারিগরি শিক্ষায় উন্নত, কিন্ত সাধারণ শিক্ষায় পিছিয়ে। তবে যে দেশ কারিগরি শিক্ষায় যত উন্নত, সেই দেশ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ। আমাদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টিকে কাজে লাগাতে হলে আমাদের প্রয়োজন গুণগত ও মানসম্মত তথ্য প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যথোপযুক্ত কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরীর মাধ্যমে আত্বকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষা গ্রহণরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উন্নত বিশ্বের তুলনায় অনেক কম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করার লক্ষে কারিগরি শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে পারলে দেশ দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, যে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার যত বেশি, সে দেশের মাথাপিছু আয়ও তত অধিক। উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে অধিক সংখ্যক দক্ষ জনশক্তি থাকায় সেখানকার মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় অনেক বেশি। বাংলাদেশের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি জড়িত। সেবামূলক জরুরি কাজেও তাদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিদেশে যেমন মধ্যপ্রাচ্য, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দক্ষ জনশক্তি প্রেরনের মাধ্যমে প্রচুর দৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পেশাগত জ্ঞান, কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কাজের মান ও গতিশীলতা যা দেশের আর্থসামাজিক সমৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা গড়ে তোলে ।
লেখক
মোঃ আতিকুর রহমান
ইন্সট্রাক্টর
ফুলকোট নবোদয় কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়,
শাজাহানপুর,বগুড়া ।