বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘খুবই ধূর্ত’ উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) মানুষকে রাজনীতিসচেতন করতে চায়নি। তারা একটা বিরিয়ানির প্যাকেট কিংবা মার্কা দেখিয়ে ভোট নিতে চেয়েছে। তারা রাজনৈতিকভাবে মানুষকে অশিক্ষিতই রেখেছে। তারা আর কারও হাতে ক্ষমতা দিতে চায়নি।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন মনিরা শারমিন। ‘রাজশাহী রাইজিং’ শিরোনামে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি রাজশাহী। সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের রাজশাহীর শহীদ সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল ইসলাম।
“আপনারা যদি চান, জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকেও ব্যালটের রাজনীতি হবে। আপনাদের নিয়েই হবে। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী, এমপি, মন্ত্রী আপনারাই হবেন।
–এস এম সাইফ মুস্তাফিজ, যুগ্ম সদস্যসচিব, জাতীয় নাগরিক কমিটি
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনিরা শারমিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সব সময় রাস্তায় নেমে আসে না, কিন্তু তারা নেমে এলেই অভ্যুত্থান হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, জাতীয় নাগরিক কমিটি যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছে, সেটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। আমরা সে সিস্টেম ভাঙতে চাই, যে সিস্টেমে যে কেউ, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও যেন আমাকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার একটা দানব না বানিয়ে ফেলে। এই পরিবারতন্ত্রের জন্য তো সাকিব আনজুম জীবন দেয়নি। আমরা দেখছি যে ৫ তারিখের পর থেকে শুধু মনে হচ্ছে যে হাতবদল। কিছু কিছু গোষ্ঠী নিজেদের নির্বাচিত মনে করছে। মানসিকভাবে মনে করছে যে ক্ষমতায় চলে গেছে। পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
একজন কৃষকের ছেলে কেন মনে করবে না যে সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে? এমন প্রশ্ন রেখে মনিরা শারমিন আরও বলেন, ‘কেন কিছু ধান্দাবাজ-চাঁদাবাজের হাতে রাজনীতি থাকবে? আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের তরুণরা সব সেক্টরে (খাতে) নেতৃত্ব দেবে, সেই স্বপ্ন আমরা দেখতে চাই। চব্বিশের অভ্যুত্থানে আমরা পেরেছি, কারণ, আমাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি ছিল না। সেভাবেই কাজ করতে হবে।’
সভায় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মুস্তাফিজ বলেন, ‘বর্তমানে নির্বাচনের একটা তাড়া দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস আছে; আমরা সেই জায়গাটা ফিল (অনুভব) করি। কিন্তু এখনই যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা পুরোনো ফ্যাসিবাদের জায়গায় ফিরে যাব। আমরা সেই জায়গায় আসলে ফিরে যেতে চাই না।’ সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি চান, জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকেও ব্যালটের রাজনীতি হবে। আপনাদের নিয়েই হবে। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী, এমপি, মন্ত্রী আপনারাই হবেন। আপনাদের মধ্য থেকেই হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মহুয়া মৌ ও রোহানা হকের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সহমুখপাত্র তাহসিন রিয়াজ, কেন্দ্রীয় সংগঠক সাকিব মাহাদী, জাহিদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা সংগঠক মোবাশ্বির আলিম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শুভজিৎ রায়, জাতীয় নাগরিক কমিটির মরিয়ম সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার, পৃষ্ঠপোষক রাশেদ রাজন, জাতীয় নাগরিক কমিটির স্থানীয় সংগঠক সাইফুল ইসলাম, আন্দোলনকর্মী নাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘এই শহীদদের প্রতি সম্মান তখনই আমরা দেখাতে পারব, যখন এদের নীতিগুলো আমরা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করতে পারব। নিঃস্বার্থ ত্যাগের মাধ্যমে এই বৈষম্য দূর করার জন্য আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।’ তিনি ছেলের জন্য সবার দোয়া চেয়ে আরও বলেন, ‘অফিস–আদালতে কর্মচারীরা আমাদের কষ্টের টাকায় বেতন পাবে, আবার একটা কাজের জন্য গেলে তার জন্য আবার টাকা নেবে; এটা বাংলাদেশ থেকে চিরতরে দূর করতে হবে। তাহলেই শহীদদের সম্মান করা হবে। আমি শহীদের বাবা হিসেবে বিভিন্ন অফিস–আদালতে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। গরিব মানুষের ছেলেরা যারা আহত হয়েছে, তারা একটা সাহায্যও পাননি।’
পিআলো/জা/০১