তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহী মহানগরী বিএনপির নেতা-কর্মীরা। নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের ‘অযোগ্য’ দাবি করে এক পক্ষ প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। আরেক পক্ষের অভিযোগ, আহ্বায়ক কমিটি ও তাদের বিরোধিতাকারী কোনো পক্ষেই তারা থাকছেন না। তবে নগর বিএনপির আহ্বায়ক বলছেন, দ্বন্দ্ব-বিভাজনের কথা তাঁর জানা নেই।
আরোও পড়ুন:
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশাকে আহ্বায়ক ও মামুনুর রশিদকে সদস্যসচিব করে নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করে দেয় কেন্দ্র। এ কমিটি দেওয়ার পর নগর বিএনপি থেকে দূরেই চলে যান সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন। আহ্বায়ক কমিটি দূরত্ব সৃষ্টি করে রাজশাহীর আরেক শীর্ষ নেতা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গেও। এ তিন বড় নেতাকে নগর বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে ডাকা হয় না বলে তাঁদের অভিযোগ শুরু থেকেই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ অক্টোবর নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা, যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ নগরীর সাত থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। থানায় থানায় বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, আসলাম সরকার, জয়নাল আবেদিন শিবলী ও ওয়ালিউল হক রানা পাল্টা থানা কমিটি ঘোষণা করেন। ফলে নগর বিএনপিতে নতুন আরেকটি ধারার সৃষ্টি হয়। রাজশাহী বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকতের সঙ্গে এ অংশটির যোগাযোগ ভালো।
এবার তাঁরা বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি পালন করেছেন আলাদাভাবে। আবার জেলা ও মহানগরী মুক্তিযোদ্ধা দল দুই পক্ষের কারও সঙ্গেই না গিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে মিজানুর রহমান মিনুকে নিয়ে। ফলে নগর বিএনপিতে এখন তিনটি ধারা স্পষ্ট। সম্প্রতি মিনু মুক্তিযোদ্ধা দলের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচিতে যোগ দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নগর বিএনপির সাবেক সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।
মিলনের কমিটির সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এখন কোন পক্ষের সঙ্গে আছেন, তা স্পষ্ট নয়। প্রভাবশালী নেতা মিনুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন নগর যুবদলের সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম রবি। মিনুর সঙ্গে একই কর্মসূচিতে যোগও দিচ্ছেন তিনি। আর আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন আছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশার সঙ্গে। নেতা-কর্মীরা জানান, মিনুর সঙ্গে নগর মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সব ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরও যোগাযোগ ভালো। যদিও প্রকাশ্যে অনেকেই মিনুর সঙ্গে কর্মসূচিতে যোগ দেন না। তার পরও মিনুর কারণেই ১০ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দলের শোভাযাত্রায় নেতা-কর্মীর ঢল নামে বলে মনে করেন অনেকেই। নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ালিউল হক রানা বলেন, ‘মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব তাঁদের ইচ্ছামতো দল চালাতে চান। তাই আমরা বাইরে এসেছি। আমরা কেন্দ্রের সবাইকে বলেছি তাঁদের সঙ্গে চলতে পারব না। মহানগরী বিএনপিতে একটা শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। ’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অচিরেই শুদ্ধি অভিযান করবেন আশা তাদের।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে ক্ষোভ জানালেন সিনিয়র নেতা মিজানুর রহমান মিনুও। তিনি বলেন, ‘যাঁরা এখন মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আছেন, তাঁদের দল চালানোর যোগ্যতা, মেধা কোনোটিই নেই। কয়েক দিন আগে যাঁরা আওয়ামী লীগ করেছেন, এমন লোকজনকে তাঁরা থানা কমিটিতে নিলেন! ঢাকার (কেন্দ্র) কারও কারও প্রশ্রয়ে তাঁরা এসব করছেন। ’ নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দুই পক্ষ থেকে কড়া বক্তব্য এলেও দ্বন্দ্ব-বিভেদের কিছুই জানা নেই বলে দাবি করেন আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশা। তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে কোনো ভাগ নেই। ’ বিএনপির এ দ্বন্দ্ব মেটাতে কেন্দ্র থেকে এসেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম। তিনি কথা বলেন সব পক্ষের সঙ্গে। আবদুস সালাম বলেন, ‘দুই পক্ষকে বলা হয়েছে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে একসঙ্গে রাজনীতি করতে। এর পরও কেউ দ্বন্দ্ব করতে চাইলে কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বিডিদিন/জা/০৯