রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ৮ দিন পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তানোর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করা হয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি সেলিম রেজা বাদী হয়ে এ মামল করেন। মামলা হওয়ার ৭ দিনেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এ মামলায় ১ নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে সোহেল রানাকে। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ইমরুল হকের আপন ভাই। বাড়ি হরিদেবপুর গ্রামে।
মামলার ৫ নম্বর আসামি শফি কামাল মিন্টু। তিনি উপজেলার কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি কামারগাঁ গ্রামে।
অপরদিকে মামলার ৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে তোফায়েল হোসেনকে। তিনি উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমানে ইউপি মেম্বার। এর বাড়ি কামারগাঁ গ্রামে।
এছাড়া ২ নম্বর আসামি রেজাউল ইসলাম তানোর পৌর যুবলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি চাপড়া গ্রামে। তৌহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ সমর্থক। তাকে ৩ নম্বর আসামি দেখিয়ে মামলায় ৫০-৬০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা রাজশাহী-১ (তানোর গোদাগাড়ী) আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিশিষ্ট শিল্পপতি অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক কেন্দ্রীয় বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তানোর থানা মোড়, মুণ্ডুমালা বাজার ও বাধাইড় ইউপিসহ বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করার কথা ছিল।
সেই মতে গত ১৫ ডিসেম্বর তানোর উপজেলায় ১৩-১৪টির মতো মাইক্রোবাসসহ তানোর সদরে শোডাউন নিয়ে আসেন তিনি। এর আগে দুটি মাইক্রোবাস উপজেলা পরিষদ ও ডাকবাংলো চত্বরে দেয়াল ঘেঁষে রাখা হয়।
খবর পেয়ে মাইক্রোবাসে হামলা ও ভাঙচুর আর মারপিট শুরু করেন বিএনপি নেতা মিজান গ্রুপের তানোর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানের ভগিনীপতি হাবিবসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর্যন্ত চলে মারপিট ও ধাওয়া পালটা ধাওয়া আর ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এতে জনদুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। হামলায় উভয় গ্রুপের অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হন।
পরে উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে থানা মোড়ে ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য লিফলেট বিতরণ ও পথসভা করেন অ্যাডভোকেট তারেক।
ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধমে খবর প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৭ ডিসেম্বর রাজশাহী নগরীর অলোকার মোড়ের একটি রেস্তোরাঁয় বিএনপি নেতা মিজান ও তার অনুসারীদের বহিষ্কার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন তারেকের অনুসারী নেতাকর্মীরা।
এছাড়া ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে তানোর বিএনপির পার্টি অফিসে মিজান অনুসারী নেতাকর্মীরা অ্যাডভোকেট তারেককেও বহিষ্কার দাবিতে পালটা সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ ধরনের ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। তবে ২২ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি সেলিম রেজা বাদী হয়ে উল্টো আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তানোর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সেলিম রেজা বলেন, আসলে তেমনভাবে মামলার আসামিদের কাউকে চেনেন না তিনি। তানোরে তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা যাদের নাম-পরিচয় দিয়েছেন, শুধু তাদেরই আসামি করা হয়েছে। তবে মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত বলে প্রমাণ পাবে তাদের বিরুদ্ধেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তার এমন বক্তব্যের কল রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষণ রয়েছে।
এ নিয়ে উপজেলার কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শফি কামাল মিন্টু বলেন, শুনেছি বেশ কয়েক দিন আগে শোডাউন নিয়ে বিএনপির মিজান গ্রুপ আর তারেক গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগ করি। বিএনপির মাইক্রোবাস শোডাউনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তিনিসহ শুধু আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৫ জন নামধারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ঘটনার প্রায় সপ্তাহখানেক পর বাদীর অভিযোগ পেয়ে থানায় মামলা করা হয়েছে। বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে এর তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ওসি।
যআন্তর/জা/০২