রাজশাহীতে চলছে ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এই সংকটপূর্ণ সময়েও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মশক নিধন কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে গাফিলতি। পর্যাপ্ত ওষুধের অভাবে থমকে আছে এই কার্যক্রম। রাসিকের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ না পাওয়ায় মশা নিধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, তবে দ্রুতই ওষুধ সংগ্রহ করে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, রাজশাহী নগরীতে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে, যেখানে নিয়মিত লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড নামক দুটি ওষুধ ব্যবহার করা হয় মশা নিধনের জন্য। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাসিকের কাছে সরবরাহ করা হয়েছিল এক হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৬০০ লিটার অ্যাডাল্টিসাইড, তবে বর্তমানে মজুদে আছে মাত্র ১০০ লিটার লার্ভিসাইড ও ২০০ লিটার অ্যাডাল্টিসাইড।
রাসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ জানায়, প্রতিবছর প্রায় ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার লার্ভিসাইড ও ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার অ্যাডাল্টিসাইড কেনার প্রয়োজন হয়। কেরোসিন ও ডিজেলসহ প্রতি বছর মশা নিধন কার্যক্রমে রাসিকের মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি টাকা।
এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালকের মতে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২,৮৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪০ জন। বর্তমানে রামেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭০ জন রোগী, আর এ বছর ডেঙ্গুতে মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর মশার উপস্থিতি বেশি, এবং ডেঙ্গুর লার্ভাও স্থানীয়ভাবে পাওয়া গেছে। এ বছর রোগীর সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি, যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।’
নগরীর সাহেববাজারের বাসিন্দা সজিব জয়সোয়াল অভিযোগ করেন, ‘দিন-রাত মশার কামড় থেকে রেহাই মিলছে না, এমনকি কয়েল জ্বালিয়েও বাচ্চাদের মশারির ভেতরে রাখতে হচ্ছে। গত ১০-১৫ দিনে আমাদের এলাকায় মশক নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি, অথচ ডেঙ্গু মহামারির মতো ছড়াচ্ছে।’
একই অভিযোগ করেন নগরীর দাশ পুকুর এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মশার উৎপাত এমন হয়েছে যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। সিটি কর্পোরেশন এখন যদি মশা না মারে, তাহলে ডেঙ্গু চলে গেলে তো আর মশা মারার অর্থ থাকবে না।’
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন জানান, ‘আমাদের চাহিদা মতো পর্যাপ্ত ঔষধ নেই। মাত্র ৭ দিন অ্যাডাল্টিসাইড প্রয়োগ করতে পারবো। এজন্য পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারিনি, তবে সামনে ব্রিডিং মৌসুমে এটি ব্যবহার করা হবে। লার্ভিসাইডও ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে, এরপরে মজুদে আর কিছু থাকবে না।’
রাসিকের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমাদের বর্তমান মজুদে ডিসেম্বর পর্যন্ত মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে। তবে এই মজুদ দীর্ঘমেয়াদে চলবে না, তাই আমরা সরকারের কাছে আরও ওষুধ বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে সরকার আমাদের জন্য ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যা দিয়ে পর্যাপ্ত ওষুধ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। আমরা দ্রুতই দরপত্র আহ্বান করার পরিকল্পনা করেছি, যাতে করে শীঘ্রই এই ওষুধগুলো সংগ্রহ করে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা যায়। নগরবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং অতিসত্বর এই কার্যক্রম শুরু করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
সূত্র: ইন্টারনেট