কম খরচে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে বিশেষ ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৯টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে রাজশাহী কৃষি স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করা হয়। তবে উদ্বোধনের পর কৃষিপণ্য ছাড়াই ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রহনপুর ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী রাকিব। স্পেশাল ট্রেনটিতে কোনো কৃষি পণ্য বুক করেননি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী রেল স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মো. আব্দুল মোমিন বলেন, স্পেশাল ট্রেনটিতে প্রারম্ভিক স্টেশন রহনপুর থেকে পণ্য ছাড়াই রাজশাহী এসেছে। রাজশাহীতেও কোনো কৃষিপণ্য বুকিং হয়নি। ফলে কৃষিপণ্য ছাড়াই ট্রেনটি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। পথেও ট্রেনটিতে কোনো কৃষিপণ্য বুকিং হয়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে তিনটি কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে। এর মধ্যে গত ২২ অক্টোবর যশোরে উদ্বোধন করা হয় প্রথম ‘যশোর কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। মাত্র ২৬৮ কেজি কৃষিপণ্য নিয়ে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যশোর ছাড়ে। এরপর গত ২৪ অক্টোবর পঞ্চগড়ে উদ্বোধন করা হয় দ্বিতীয় ‘পঞ্চগড় কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। কৃষিপণ্য ছাড়াই ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে পঞ্চগড় ছাড়ে। সর্বশেষ শনিবার রহনপুরে উদ্বোধন করা হয় তৃতীয় ‘রাজশাহী কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। সেটিও কৃষিপণ্য ছাড়াই ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
আলাপকালে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকায় কৃষিপণ্য পরিবহনে কেজিপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। এর সঙ্গে মাঠ থেকে রেলওয়ে স্টেশন এবং রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোকামে পৌঁছানোর জন্য আলাদা পরিবহন এবং কুলি খরচ যোগ করলে প্রতি কেজির গড় ভাড়া লাগছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকার বেশি। অথচ সড়কপথে ট্রাকে পণ্য পরিবহন করতে তাদের খরচ হয় কেজিপ্রতি দুই-আড়াই টাকা।
এছাড়া ট্রেনের প্রারম্ভিক সময় সকালে এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় বিকালে হওয়ায় বাজারজাত নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। অন্যদিকে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়সহ নানা কারণে কৃষিপণ্য সময় মতো পৌঁছাতে না পারলে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া গরমে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেই।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম বলেন, কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেনগুলোতে প্রতিদিন ১২০ টন পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা মিলবে। প্রতি কেজি সবজি ও কৃষিপণ্য বহনে খরচ পড়বে ১ টাকা ৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৭ পয়সা। ট্রেনের অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে ফল ও সবজি পরিবহন করা যাবে। এছাড়া রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত পণ্য মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহনের সুযোগ থাকছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী ডলার বলেন, ট্রেনের মূল ভাড়া কম। তবে ফসলের মাঠ থেকে স্টেশন এবং স্টেশন থেকে মোকাম এবং প্লাটফরম থেকে ট্রেনে উঠানো ও নামানোর কুলি ভাড়া, আবার স্টেশন থেকে বাজার বা মোকামে কৃষিপণ্য পরিবহন করতে বাড়তি খরচ রয়েছে। এছাড়া আলাদা যানবাহন সময়মত প্রাপ্তির নিশ্চয়তার গ্যারান্টির অভাব তো রয়েছেই।
তিনি আরও বলেন, ট্রেনে পণ্য উঠানো ও নামানোতে কুলিরা যে যার ইচ্ছামতো টাকা নেয়। অন্যদিকে সড়কপথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ঢাকার বাজারে কৃষিপণ্য পাঠাতে খরচ হয় প্রতি কেজিতে দুই থেকে আড়াই টাকা। আর ট্রেনে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে যাচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে টাকারও বেশি। এর সঙ্গে ভোগান্তি তো রয়েছেই। এজন্য ট্রেনে পণ্য পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেউ।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চীফ কমার্শিয়াল অফিসার সুজিত বিশ্বাস বলেন, আমরা কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। রাজশাহী কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকার তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাচ্ছে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে। এতে প্রতি কেজি কৃষিপণ্যের ভাড়া বাবদ খরচ পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা।
সূত্র: ইন্টারনেট