শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন

আসামির নাম কাটা নিয়ে রাজশাহীতে ছাত্রদল নেতার দেনদরবার ফাঁস

প্রথম পাতা
প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে ছাত্রদলের এক নেতা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এখন তিনি টাকার বিনিময়ে অভিযোগপত্র থেকে আসামির নাম বাদ দিতে ফোনে আলাপ করেছেন। সেই ফোনালাপ আবার ছাত্রদলের আরেক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে রাজশাহীতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ফোনালাপের সাতটি অডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন খোদ মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান (সৌরভ)। পরে অবশ্য তিনি সেগুলো মুছে (ডিলিট) ফেলেন। তবে প্রয়োজন পড়লে তিনি সেগুলো আবার পোস্ট করবেন বলে জানিয়েছেন। মাকসুদুর জানান, আসামির সঙ্গে কথোপকথন ছাত্রদলেরই এক নেতার। তিনি নগরের বোয়ালিয়া (পূর্ব) থানা ছাত্রদলের সদস্য সাইমন রেজা। এ ব্যাপারে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

তবে ছাত্রদল নেতা সাইমন রেজা দাবি করেছেন, ‘অডিওগুলো বানানো। তা না হলে ফেসবুকে দেওয়ার পর আবার ডিলিট করেছে কেন?’ তবে একপর্যায়ে তিনি প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, আসামির সঙ্গে তাঁর অন্য বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। মামলা থেকে ওই আসামির নাম বাদ দিতে ওপর মহল চাপ দিচ্ছিল। টাকার বিনিময়ে নাম কেটে দেওয়ার বিষয়ে কথা হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা সাইমন রেজা বাদী হয়ে গত ২৭ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেলকেও আসামি করা হয়েছে। মামলায় পায়েল নামের আরেক আসামি আছেন, যিনি আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। ওই পায়েলের কাছে সাইমন টাকা চেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।

ছাত্রদল নেতা মাকসুদুর রহমান সাতটি অডিও প্রকাশ করেন। এতে দেখা যাচ্ছে, একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে সাইমন রেজার মুঠোফোন নম্বরে কল করা হচ্ছে। সৌরভের দাবি, সাইমনের সঙ্গেই মুঠোফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে মামলার বিষয়ে কথা বলেছেন পায়েল। তবে আত্মগোপনে থাকায় পায়েলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কথোপকথনের একটি অডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘কাল তো মঙ্গলবার। কাল আমি লোন লেখাব। ইনশা আল্লাহ আগামী মঙ্গলবার দিয়ে দেব।’ অন্যজন বলছেন, ‘সবার কথা হলো, ৫০-এর নিচে আসবে না। আমি কথা বললাম। ওদের সবারই একটা মতামত, আমরা কিছু নামলাম, ওকেও কিছু উঠতে বলো। আর পাঁচটা হাজার টাকা দিয়ে ২৫ করতে বলো। যদি হয় তো বলো, যা করার করে দিচ্ছি। ওর কোনো সমস্যা হবে না।’

আরেকটি অডিওতে একজন বলছেন, ‘আমি ১০ হাজার টাকার মতো রেডি করে ফেলেছি। আর ১৫ হাজার টাকা, আর তো দুই দিন টাইম নেওয়া আছে। আমি যেদিন টাকা দেব, সেদিনই কোর্ট থেকে নামটা তুলে দেবেন না ভাইয়া।’ তখন অপরজন বলেন, ‘আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আপনি দোকানে বসবেন। আপনার কোনো সমস্যা হলে আমি আছি।’

আরেকটি অডিওতে একজন বলছেন, ‘আপনাকে একটা নম্বর দিচ্ছি, ওখানে আপনি ১০ মেরে দিয়েন। আপনি দোকান করবেন। যদি কোনো সমস্যা হয়, আমার নম্বর তো থাকলই। সমস্যা হলে আমাকে কল

দেবেন। আপনার নাম অটোমেটিক কাটা হয়ে যাবে। আপনি দেখবেন। কাটা হয়ে গেলে আপনাকে ছবি তুলে দিয়ে দেব।’ অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলছেন, ‘তাহলে আমি পরশু দিন ফুল পেমেন্ট দিয়ে দেব।’ তখন অন্যজন বলছেন, ‘আজ ১০ হলে ভালো হয়, আমার একটু লাগত।’

আরেকটি অডিওতে জেলে না যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আপনার যদি দুই দিনের লাইগাও ভেতরে থাকতে হয়, আপনার স্যান্ডেল খুইলে আমার গালে মাইরেন, যান।’ অপর অডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি একা না। আরও দু-তিনজনকে বের করা লাগবে। তোমাকে যেটুকু হেল্প করছি, সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবেই রিস্কের মধ্যেই করছি।’

এ ব্যাপারে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘পায়েল পুলিশের সোর্স ছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতেই পারে। কিন্তু আমরা টাকা আদায় করতে পারি না। দলের মধ্যে সাইমন কয়েকজনকে নিয়ে একটা সিন্ডিকেট করে এভাবে টাকা আদায় করছে। এত দিন প্রমাণ ছিল না বলে চুপ ছিলাম। প্রমাণ পাওয়ায় এগুলো প্রকাশ করেছি। সবই কেন্দ্র জানে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ১ নম্বর ভাইস প্রেসিডেন্ট জহির ভাই এসেছেন। তিনি এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে আছেন। তিনি রাজশাহীতে এসে এ বিষয়ে বসবেন।’ ফেসবুক পোস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই বলছিল, দলের মধ্যে এগুলো শোভনীয় না। দলেরই বদনাম হয়। তাই ডিলিট করেছিলাম। প্রয়োজনে আবার পোস্ট দেব।’

সূত্রঃ ইন্টারনেট


আরো পড়ুন

মন্তব্য